ইসলামিক পোস্ট

বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় ২০২৪

জানুনঃ কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হয় ২০২৩? কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ? কত ভরি স্বর্ণ থাকলে যাকাত দিতে হয়? সর্বনিম্ন কত টাকা থাকলে যাকাত দিতে হবে?

ইসলামে যাকাতের মূল্য অনেক কিন্তু এই যাকাত সবার উপর ফরজ না। যাকাত ফরজ হওয়ার অনেক গুলো শর্ত আছে, যদি এই শর্ত গুলোর মধ্যে আপনি না পড়েন তাহলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে না।

কিন্তু আপনি যদি নিসাব পরিমান সম্পদের মালিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে যাকাত দিতে হবেনিসাব পরিমান সম্পদের মালিক বলতে বুঝানো হয়েছে সাড়ে সাত তোলা সোনা বা সাড়ে বায়ান্না তুলা রুপা

এই সম্পদের মালিক যদি আপনি হয়ে থাকেন তাহলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে।

আপনার কাছে যদি বর্তমান বাজারের মূল্যে সোনা বা রুপা দামে সেই পরিমানে টাকা থাকে তাহলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে। বর্তমানে যদি আমরা সোনার দাম হিসাব করি তাহলে ৬ লক্ষ টাকার পরিমাণ আপনার সম্পদ থাকলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে।

আর যদি রুপার দাম হিসাব করি তাহলে ৫০ বা ৬০ হাজার টাকা থাকলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে।

যাকাত কি?

ইসলামের মূল স্তম্ভ পাঁচটি। ঈমান,নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত। যার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর থাকবে তাকে যাকাত দিতে হবে।

নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলো সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা। যে ব্যাক্তি এই সম্পদের মালিক হবে তার উপর যাকাত ফরজ হবে।

যাকাতের গুরুত্ব

ধনী ব্যাক্তিদের উপর যাকাত ফরজ করা হয়েছে। কারণ ধনী ব্যাক্তিদের কাছে অনেক সম্পদ থাকবে আর প্রতিবেশী না খেয়ে থাকবে তা ইসলাম মেনে নেয় না।

তাই ধনী ব্যাক্তিদের উপর যাকাত ফরজ করা হয়েছে। যাকাত ছাড়া ইসলামের দিন পূর্ণতা লাভ করে না, কারণ ইসলাম হলো সামঞ্জস্য ও পূর্ণ জীবন ব্যবস্থা।

যে ব্যাক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকবে তাকে যাকাত দিতে হবে ও হজ্জ পালন করতে হবে। সূরা বাকারার ৪৩ আয়াতে উল্লেখ রয়েছে, তোমরা নামাজ কায়েম কর, যাকাত আদায় করো ও রুকু কর রুকুদারীদের সাথে।

বিশ্বনবী (সাঃ) বলেন, তাদের মধ্যে যারা ধনী তাদের থেকে সম্পদ গ্রহণ করা হবে। আর তাদের মধ্যে যারা দরিদ্র তাদের মধ্যে সম্পদ বন্টন করতে হবে।

( বুখারী ১৪০১)

একজন ব্যাক্তির হাতে বিপুল পরিমাণ অর্থ সম্পদ জমা হওয়া ইসলাম পছন্দ করে না। তাই ধনী ব্যাক্তিদের উপর যাকাত ফরজ করা হয়েছে।

ইসলাম ধর্ম সব সময় চায় ধনী-গরিব সবাই স্বাচ্ছন্দে ও সুন্দরভাবে জীবন যাপান করুক। তাই ধনী ব্যাক্তিদের সঠিকভাবে যাকাত আদায় করতে হবে। এই সব কারণেই ইসলামে যাকাতের গুরুত্ব অপরিসীম।

নিসাব পরিমাণ কি?

যে পরিমানের সম্পদ থাকলে আপনাকে যাকাত দিতে হয় সেই পরিমাণই হচ্ছে নিসাব পরিমাণ। নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলো সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা অথবা সেই পরিমানের নগদ টাকা।

কারো কাছে যদি সাড়ে সাত ভরি সোনা বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপা থাকে তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবেকোনো ব্যাক্তির কাছে যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ একবছর থাকে তাহলে সেই ব্যাক্তির উপর যাকাত ফরজ হবে

যাকাত ফরজের শর্ত কয়টি?

যাকাত ফরজ হওয়ার শর্তটি পাঁচটি। শর্ত গুলো হলোঃ

  1. নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে।
  2. নিসাব পরিমাণ সম্পদ ১ বছর নিজের কাছে থাকলে। সেই সম্পদ চন্দ্র বছর হতে হবে।
  3. সম্পদের মালিক নিজেকে হতে হবে।
  4. সেই সম্পদ হতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত।
  5. যার বেশি পরিমাণ ঋণ না থাকে।

কারো মধ্যে যদি এই পাঁচটি শর্তের মাঝে যেকোনো একটি সমস্যা হয় তাহলে তার উপর যাকাত ফরজ হবে না।

কত টাকার কত যাকাত?

কারো কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে। যাকাতের পরিমাণ হচ্ছে শতকরা ২.৫ টাকা

কারো কাজে যদি ১ লক্ষ টাকা থাকে তাহলে তাকে ২৫ হাজার টাকা যাকাত দিতে হবে। এই নিয়মে যাকাত দিয়ে হয়

কোন হিজরীতে যাকাত ফরজ করা হয়

কোনো ব্যাক্তির সম্পদ যদি হিজরী এক বছর সময় নিজের কাছে থাকে তাহলে দ্বিতীয় হিজরীতে তাকে যাকাত করতে হবে। নিসাব পরিমাণ সম্পদ থেকে নিদির্ষ্ট সম্পদ গরিব, মিসকিনদের মাঝে বন্টন করে দিতে হবে।

বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়

বর্তমানে অনেকেই জানে না কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয়। সম্পদের যাকাত না দিলে সম্পদ হারাম হয়ে যায় ও যাকাত করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায়।

কোনো ব্যাক্তির কাছে যদি সোনার পরিমানে বর্তমানে ৬ লক্ষ টাকা থাকলে তাকে যাকাত দিতে হবেএবং রুপার পরিমানে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা থাকে তাহলে সেই ব্যক্তিকে যাকাত দিতে হবে

নিসাব পরিমান সম্পদ যদি এক বছর থাকে তাহলে আপনাকে যাকাত দিতে হবে

কোন কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে যে কোন কোন সম্পদের উপরের যাকাত ফরজ। চলুন আমরা জেনে নেই কোন সম্পদের উপর যাকাত ফরজ

  • সোনা-রুপার অলংকার
  • মূল্যবান ধাতু
  • নগদ অর্থ
  • বাণিজ্যিক পন্য
  • উৎপাদিত কৃষি ফসল
  • পশু সম্পর্কে ৪০টি ছাগল বা ভেড়া ও ৩০টির উপর গরু, মহিষ থাকলে যাকাত ফরজ হবে।

আপনার যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে তাহলে আপনাকে যাকাত প্রদান করতে হবে। যাকাতের পরিমাণ উপরেও আলোচনা করা হয়েছে।

১ ভরি স্বর্ণের যাকাত কত ২০২৪?

স্বর্ণের ধরণবাজার মূল্য১ ভরি স্বর্ণের যাকাত
২২ ক্যারেট৯৭০০০৳২৪২৫৳
২১ ক্যারেট৯৩০০০৳২৩২৫৳
১৮ ক্যারেট৭৯০০০৳১৯৭৫৳
গড়৮৯৬৬৭৳ প্রায়২২২৫৳ প্রায়
১ ভরি স্বণের যাকাত কত ২০২৩?

বর্তমানে ১ ভরি সোনার যাকাত প্রায় ২২২৫ টাকা। বাজারের মূল্য সব সময় এক থাকে না বিধায় যাকাতের পরিমাণ কম বেশি হতে পারে।

যাকাতের বিবরণ কবে প্রকাশিত হয়

কোনো ব্যাক্তির কাছে যদি নিসাব পরিমাণ সম্পদ এক বছর থাকে তাহলে দ্বিতীয় হিজরীতে তাকে যাকাত প্রদান করতে হবে। যাকাতের মাধ্যমে সম্পদ বৃদ্ধি পায়। যাকাত মাধ্যমে এলাকার গরিন-মিসকিন উপকৃত হয়। হিজরী দ্বিতীয় সনে যাকাতের বিবরনী প্রকাশ করা হয়

যাকাত কাকে দিতে হবে স্বামী নাকি স্ত্রী?

স্বামী যদি সম্পদের মালি হয় তাহলে স্বামীকে যাকাত দিতে হবে আর যদি স্ত্রী সম্পদের মালিক হয় তাহলে স্ত্রীকেই যাকাত দিতে হবে। যে ব্যাক্তি নিসাব পরিমানের মালিক হবে তাকেই যাকাত দিতে হবে এখানে নারী-পুরুষের কোনো পার্থক্য নেই।

কারা যাকাত নিতে পারবে?

সব ব্যাক্তিকে যাকাত প্রদান করা যাবে না যে ব্যাক্তি যাকাত পাওয়ার যোগ্য তাকেই যাকাত প্রদান করতে হবে। চলুন জেনেই নেই কারা যাকাত নিতে পারবেঃ

  • নও মুসলিম
  • দাস মুক্তির জন্য
  • ফকির
  • অভাবগ্রস্ত মিসকিন
  • বিপদগ্রস্ত মুসাফির
  • যাকাত আদায়কারী
  • ঋণগ্রস্ত ব্যাক্তি।

তারাই হচ্ছে যাকাতের সঠিক ব্যাক্তি। আপনার আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে কেউ যদি ঋণগ্রস্ত থাকে তাহলে তাকেও যাকাত প্রদান করতে পারবেন।

শেষ কথাঃ বর্তমানে কত টাকা থাকলে যাকাত ফরজ হয় ২০২৪

কোনো ব্যাক্তি যদি নিসাব পরিমান সম্পদ থাকার পরও যাকাত না দেয় তাহলে সেই ব্যাক্তি কাফের হয়ে যাবে কারণ ইসলামের পাচটি স্তম্ভের মাঝে যাকাত একটি। কারো যদি যাকাত দেওয়ার মতো অর্থ থাকে তাহলে তাকে যাকাত দিতে হবে

যাকাত দিলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং পবিত্র হয়। তাই যাদের নিসাব পরিমাণ সম্পদ আছে তাদের যাকাত দেওয়া উচিৎ। মহান আল্লাহ তায়ালা সঠিক নিয়মে যাকাত দেওয়ার তাওফিক দান করুন।

সম্পর্কিত আর্টিকেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

অ্যাডব্লকার ডিটেক্ট হয়েছে!

মনে হচ্ছে আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমাদের সাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অ্যাড ব্লকার বন্ধ করতে হবে। যদি অ্যাডব্লকার ব্যবহার না করেন, তাহলে পেজটি রিফ্রেশ করুন।