সমসাময়িক তথ্য

ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক পরিচিতি: ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক এর অপকারিতা

বর্তমানে বাংলাদেশ বলুন কিংবা অন্য কোনো দেশ! প্রায় প্রতিটি স্থানেই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক।

তবে অনেকে জানে না ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক এর অপকারিতাগুলি কি কি এবং এই ড্রিংক কিভাবে আমাদের দেহে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। 

তীব্র শারীরিক কার্যক

লাপের সময় কিংবা যেকোনো ব্যায়ামের সময় এই এই ড্রিংক সরাসরি ঘামের সাথে কাজ করে। চলুন বিস্তারিত জানি।

ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক?

মূলত সোডিয়াম, পটাসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো উপাদানের সাহায্যে তৈরি করা হয় এই ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক।

আরেকটু বিস্তারিতভাবে যদি বলি, তাহলে বলবো ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক বা পানীয়তে সাধারণত পানি, ইলেক্ট্রোলাইট এবং কখনও কখনও শর্করার আকারে কার্বোহাইড্রেট থাকে। 

ডিহাইড্রেশন প্রতিরোধ, অ্যাথলেটিক কর্মক্ষমতা বাড়াতে এবং ব্যায়াম করার সময় শরীরের এনার্জি বুস্ট করতে কাজে লাগে এই স্পেশাল ড্রিংক। 

বর্তমানে ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকের ব্র্যান্ড হিসাবে বাজারে পাওয়া যাচ্ছে গেটোরেড, পাওয়ারেড এবং বিভিন্ন স্পোর্টস ড্রিংক মিক্স। 

এসব ড্রিংক সাধারণত শরীরের তরল ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। এর পাশাপাশি শরীরের সম্পূর্ণ সেলুলার ফাংশন বজায় রাখতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে করে এই ড্রিংক।

ইলেকট্রোলাইট ড্রিংক খাওয়া কি ভালো?

এবার আসি ইলেকট্রোলাইট ড্রিংক খাওয়া কি ভালো নাকি খারাপ… সে ব্যাপারে! সাধারণত একজন ব্যক্তির বিভিন্ন শারীরিক কার্যকলাপের স্তর এবং নির্দিষ্ট পরিস্থিতির উপর নির্ভর করে এই প্রশ্নের উত্তরটি নির্ধারিত হয়ে থাকে। 

তবে যারা সারাদিন কায়িক শ্রম দেন, অনেক পরিশ্রম করেন, প্রচুর খাটেন, ব্যায়াম করেন কিংবা বিভিন্ন খেলাধুলায় জড়িত থাকেন তাদের ক্ষেত্রে এই ইলেকট্রোলাইট ড্রিংক খাওয়াটা জরুরি। কারণ এই ক্যাটাগরির মানুষের শরীরের কার্যক্ষমতা বজায় রাখতে সহায়তা করে থাকে এক একটি ইলেকট্রোলাইট ড্রিংক।

ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক এর অপকারিতাগুলি কি কি?

আপনি কি জানেন উপকারিতার পাশাপাশি ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক এর অপকারিতাও রয়েছে? হ্যাঁ! এতোসব সুবিধা থাকার পরও এই ড্রিংক মাঝেমধ্যে আমাদের দেহে বিভিন্ন ক্ষতির কারণ হয়ে উঠতে পারে। যেমন:

অতিরিক্ত চিনির ব্যবহার:

ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকে অনেক বেশি চিনি ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যার কারণে এসব ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়তে থাকে উচ্চ মাত্রায় যুক্ত শর্করা। কখনো কখনো এক একটি বোতলে ৩০ গ্রামেরও বেশি চিনির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। দিনশেষে এই ড্রিংক অতিরিক্ত পান করার কারণে এতে থাকা শর্করা থেকে অতিরিক্ত ক্যালোরি শরীরের চর্বি বৃদ্ধি করে ফেলে। ফলে দেহে দেখা দিতে পারে অতিরিক্ত ওজন এবং স্থূলতা। এছাড়াও যাদের টাইপ 2 ডায়াবেটিস আছে তাদের ইনসুলিনে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এই বিশেষ ড্রিংক।

কৃত্রিম উপাদানের ব্যবহার:

অনেক ইলেক্ট্রোলাইট পানীয়তে কৃত্রিম স্বাদ, রঙ এবং অন্যান্য কৃত্রিম উপাদান ব্যবহার করা হয়। সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো এসব উপদানে প্রচুর পরিমাণে অ্যালার্জি থাকতে পারে। যা আমবাত, চুলকানি বা আরও গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে ব্যাক্তিকে একেবারে রোগী বানিয়েই ছাড়ে। তাছাড়া ড্রিংকে ব্যবহৃত এসব উপাদান শিশুদের মধ্যে হাইপারঅ্যাকটিভিটির মতো স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। অন্যদিকে এসব কৃত্রিম উপাদানের কারণে দেখা দেওয়া শারীরিক রাসায়নিক উপাদানজনিত সমস্যা তো রয়েছেই!

অতিরিক্ত সোডিয়ামের ব্যবহার:

বলে রাখা ভালো অনেক ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকে থাকে উচ্চ মাত্রার সোডিয়াম। কখনো কখনো এর পরিমাণ থাকে ২০০ মিলিগ্রামের উপরে। দেহের হাইড্রেশনের ব্যালেন্স বজায় রাখা এবং স্নায়ুর কার্যকারিতা বজায় রাখার জন্য এই সোডিয়াম অপরিহার্য। কিন্তু সোডিয়ামের অতিরিক্ত গ্রহণ দেহের রক্তের পরিমাণকে বাড়িয়ে দিতে পারে। তাছাড়া উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি তো আছেই! আবার হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকসহ যেকোনো কার্ডিওভাসকুলার রোগের জন্যেও দায়ী করা হয় সোডিয়ামকে। পাশাপাশি অতিরিক্ত সোডিয়াম গ্রহণ করলে দেহে কিডনির কার্যকারিতা ব্যাহত হয়। পাশাপাশি কিডনিতে পাথর এবং দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেকটাই বেড়ে যায়। 

ক্যালোরির অতিরিক্ত ব্যবহার:

গবেষণা বলছে পর্যাপ্ত শারীরিক কার্যকলাপ ছাড়া ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক গ্রহণ করার অনেক সাইড এফেক্ট রয়েছে। কারণ প্রতি বোতল ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকে থাকে ১৫০ ক্যালোরি। আর এই অতিরিক্ত অতিরিক্ত ক্যালোরি সময়ের সাথে সাথে জমা হতে পারে দেহে। সবশেষে এই জমা হওয়া ক্যালোরি শরীরের চর্বি এবং ওজন বৃদ্ধির মতো সমস্যা সৃষ্টি করে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্যালোরির কারণে এই ড্রিংক আপনার হজম শক্তিকেও পুরোপুরি অচল করে দিতে পারে। 

উপরোক্ত ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক এর অপকারিতা ছাড়াও বেশকিছু যুক্তিযুক্ত কারণ রয়েছে এই ড্রিংকটিকে পুরোপুরি না বলার। তাছাড়া বাজারে এই ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক এর দামও খুব একটা কম নয়! সুতরাং লজিক অনুযায়ী এতো বাড়তি দামে বিষ কিনে দেহের ক্ষতি করার কোনো মানেই নেই! তাই নয় কি?

ইলেকট্রোলাইট বেশি হলে কি হয়?

ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক এর অপকারিতা সম্পর্কে জানার পরও যারা ভাবছেন ইলেকট্রোলাইট বেশি হলে কি হয়! কিংবা যারা বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না তাদের জানিয়ে রাখা ভালো অত্যধিক ইলেক্ট্রোলাইট পান করার ফলে দেহে বিভিন্ন রোগের দেখা দিতে পারে। যেমন:

হাইপারনেট্রেমিয়া (অতিরিক্ত সোডিয়াম): এই রোগের কারণে দেহে বিভিন্ন ধরণের সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন পানির পিপাসা বেড়ে যেতে পারে, মাঝেমধ্যে ভ্রম দেখা দিতে পারে, পেশীতে খুব ব্যাথা করতে পারে। আর গুরুতর ক্ষেত্রে দেখা দিতে পারে খিঁচুনি।

হাইপারক্যালেমিয়া (অতিরিক্ত পটাসিয়াম): অন্যদিকে হাইপারক্যালেমিয়া রোগ হলে ব্যাক্তির দুর্বলতা, ক্লান্তি, হার্টবিড সবই বেড়ে যাবে। গুরুতর ক্ষেত্রে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট নামক শারীরিক জটিলতাও দেখা দিতে পারে।

হাইপারক্যালসেমিয়া (অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম): যদি অতিরিক্ত পরিমাণে ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক পান করার কারণে আপনার হাইপারক্যালসেমিয়া সমস্যা দেখা দেয় সেক্ষেত্রে বমি বমি ভাব বেড়ে গিয়ে বমি হতে পারে। বাড়তে পারে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা। দেখা দিতে পারে ভ্রমজনিত সমস্যা এবং অস্বাভাবিক হার্টবিড।

প্রতিদিন ইলেকট্রোলাইট খাওয়া যাবে কি?

হ্যাঁ! সুষম খাদ্যের মাধ্যমে প্রতিদিন ইলেক্ট্রোলাইট গ্রহণ করতে পারবেন আপনিও! তবে তা ড্রিংক আকারে গ্রহণ না করে সাপ্লিমেন্ট আকারে গ্রহণ করাটাই শ্রেয়। যেমন:

  • সোডিয়ামের জন্য ট্রাই করতে পারেন লবণ, স্যুপ এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার
  • পটাশিয়ামের জন্য ট্রাই করতে পারেন কলা, কমলালেবু, আলু, পালং শাক এবং দই
  • ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেশিয়াম জন্য ট্রাই করতে পারেন দুগ্ধজাত খাবার, শাক, বাদাম

ইতি কথা

ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংক এর অপকারিতা আমাদের দেহের জন্যে হুমকি হলেও দিনশেষে আমাদের দেহে ইলেক্ট্রোলাইট উপাদানের চাহিদা থাকতেই পারে। যা বিভিন্ন প্রাকৃতিক উৎস থেকে সংগ্রহের চেষ্টা করতে হবে। সুতরাং স্বাস্থ্যসম্মত ড্রিংক পান করুন এবং সুস্থ থাকুন।

সম্পর্কিত আর্টিকেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

অ্যাডব্লকার ডিটেক্ট হয়েছে!

মনে হচ্ছে আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমাদের সাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অ্যাড ব্লকার বন্ধ করতে হবে। যদি অ্যাডব্লকার ব্যবহার না করেন, তাহলে পেজটি রিফ্রেশ করুন।