অনলাইন ভিত্তিক জনপ্রিয় সব পেশাগুলোর মাঝে ইউটিউবিং একটি। আজ বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ ইউটিউবে তাদের সফল ক্যারিয়ার গড়তে সক্ষম হয়েছেন।
তবে সময়ের সাথে সাথে প্রতিনিয়ত সব কিছুই আপডেট হচ্ছে। এক্ষেত্রে ইউটিউবের মত প্লাটফর্মও পিছিয়ে নেই। সময়ের সাথে সাথে ইউটিউবেও এসেছে অনেক আপডেট।
আর তাই ইউটিউবে সফল হতে গেলে আপনাকেও অবশ্যই তাদের আপডেটের বিষয়ে অবগত থাকতে হবে। এই আর্টিকেলতে আমি আপনাদের কয়েকটি টিপস দিব, যেগুলো আপনার ইউটিউব সফলতার জন্য ভীষণ কাজে আসবে।
এমন একদমই নয় এসব টিপস পড়ে ফেললে আপনি ইউটিউবে সফল হতে পারবেন। তবে আপনি যদি এই কয়েকটি টিপস ফলো করে ইউটিউবে কাজ করেন তবে একসময় আপনি অবশ্যই সফলতার শিখরে পৌঁছে যেতে পারবেন।
ইউটিউবে সফল হওয়ার ৮ টি উপায়ঃ
১. সঠিক নিশ বাছাই করুন
ইউটিউবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করার পূর্বে অবশ্যই নির্দিষ্ট একটি নিশ টার্গেট করুন প্রথমে। তাহলে কি নিশ সবচেয়ে বেশি লাভজনক?
নিশ বাছাই এর ক্ষেত্রে কোন নিশ সবচেয়ে লাভজনক হবে এটা যাচাই না করে, যাচাই করুন আপনি কোন বিষয়টা নিয়ে বেশি দক্ষ। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক, আপনি ছবি এডিট বিষয়ে দক্ষ। এক্ষেত্রে আপনি একটি চ্যানেল তৈরি করে তাতে এডিট এর বিষয় উপকারী ভিডিও আপলোড করতে পারেন।
অর্থাৎ প্রথমে এটা বুঝুন, আপনি কোন বিষয়টা ভালো পারেন। মনে রাখবেন, আপনি যে বিষয়ে দক্ষ কেবল সে বিষয়ে আপনি অন্যকে শেখাতে পারবেন। এভাবে নিশ বাছাই করাটাই আপনার জন্য সবচেয়ে লাভজনক হবে।
২. নিয়মিত এসইও করুন
‘এসইও (SEO) মানে সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন’ এটা আমরা অনেকেই জানি। ইউটিউবে আপনার ভিডিওকে বেশি মানুষের কাছে দিতে এবং ভিডিও ভাইরাল করার ক্ষেত্রে YouTube SEO ফর্মুলা দারুন কাজে দিতে পারে।
তবে ইউটিউব ভিডিও এসইও করার বিষয়টা খুব একটা জটিল নয়। YouTube Video SEO বলতে কীওয়ার্ড রিসার্চ, ভিডিওর টাইটেল, ট্যাগ, থাম্বনেইল, ডেসক্রিপশন ইত্যাদি বিষয়বস্তুকে বোঝানো হয়। সুতরাং এসইও করার ক্ষেত্রে এসব বিষয়ে বিশেষ ধ্যান দিন। বিশেষ করে অবশ্যই কীওয়ার্ড রিসার্চ করে ভিডিওর টাইটেল নির্বাচন করুন।
কীওয়ার্ড রিসার্চ এর ফলে ইউটিউব সার্চ থেকে আপনি প্রচুর ট্রাফিক পেয়ে যাবেন।
৩. নিয়মিত ভিডিও আপলোড করুন
কনটেন্ট আপলোড করার ক্ষেত্রে রেগুলারিটি মেনটেইন করুন। তবে এর মানে এটা নয়, প্রতিদিন আপনাকে ভিডিও দিয়ে যেতে হবে।
যদি আপনি সপ্তাহে ৩ টি করে ভিডিও দেন, সেক্ষেত্রে প্রত্যেক সপ্তাহে তিনটি ভিডিও আপলোড করুন। একইসাথে আপলোড টাইম মেইনটেইন করবেন অবশ্যই। অর্থাৎ আজকে সন্ধ্যা ৭ টায় ভিডিও আপলোড করলে, পরবর্তীতে যখন আপলোড করবেন সেটিও অবশ্যই ঠিক ৭ টায় করবেন।
এভাবে সময় এবং রেগুলারিটি ঠিক রেখে চেষ্টা করবেন নিয়মিত ভিডিও আপলোড করতে। এর ফলে আপনার চ্যানেল দ্রুত গ্রো করা শুরু করবে।
৪. ট্রেন্ডিং টপিকে ভিডিও তৈরি করুন
বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন টপিক ট্রেন্ডিং এ থাকে। যেমন বর্তমানে ‘কাঁচা বাদাম’ গানটি বেশি ট্রেন্ডিং আছে। কিছুদিন পর হয়তো অন্য একটি বিষয় ট্রেন্ডিং এ থাকবে। আপনার চ্যানেলের ভিডিও দ্রুত ভাইরাল করতে ট্রেন্ডিং টপিক নির্বাচন করে ভিডিও আপলোড করুন। এটা আপনার চ্যানেল দ্রুত গ্রো করতে অনেক কার্যকরী একটি উপায়।
৫. হাই কোয়ালিটি ভিডিও তৈরি করুন
একটি ইউটিউব চ্যানেলের মূল হচ্ছে কনটেন্ট। সুতরাং এই কনটেন্ট তৈরির বিষয়ে আপনাকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। সবসময় চেষ্টা করবেন হাই কোয়ালিটির কনটেন্ট চ্যানেলে আপলোড করতে। তবে হাই কোয়ালিটি ভিডিও বলতে Full HD (1080p/4k) হতে হবে এমন নয়।
মাথায় রাখবেন একটি 360p/480p রেজুলেশনের ভিডিও ভাইরাল হতে পারে, যদি সে ভিডিওর অন্যান্য সব বিষয়বস্তু ঠিক থাকে। যেমন ধরুন; টাইটেল, থাম্বনেইল, ট্যাগ, ডেসক্রিপশন, ভিডিও টপিক, সাউন্ড কোয়ালিটি, ভিডিও কোয়ালিটি ইত্যাদি। এসব বিষয়ের উপর ভিত্তি করে কোয়ালিটি কনটেন্ট বিবেচনা করা হয়। সুতরাং আপনার চ্যানেলে নিয়মিত দর্শক ধরে রাখতে ভালো মানের কনটেন্ট আপলোড করুন।
৬. ওয়াচ টাইমের বিষয়ে লক্ষ রাখুন
ওয়াচ টাইম (Watch Time) অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এটা আমরা সবাই জানি। সবসময় আপনার ভিডিওর ওয়াচ টাইম এর দিকে লক্ষ রাখবেন। ধরুন আপনি ১০ মিনিটের একটি ভিডিও আপলোড করেছেন, কিন্তু দর্শকরা সেটি কেবল ৩০ সেকেন্ড, ৫০ সেকেন্ড বা ১ মিনিট দেখে স্কিপ করে চলে যাচ্ছে।
এতে করে আপনার ভিডিওটি রিচ হারাচ্ছে। ইউটিউবের এলগরিদম ধরে নিচ্ছে আপনার ভিডিওতে এমন বিশেষ কিছুই নেই যা দর্শকদের উপকারে বা কাজে লাগতে পারে। কিন্তু যদি ১০ মিনিটের সেই ভিডিওটি অন্তত ৫/৭ মিনিট করে লোকেরা দেখে তবে আপনার ভিডিওটি আরো মানুষের সামনে সাজেস্ট করানো হবে। ফলে আপনার ভিডিওটির ভাইরাল হওয়ার সুযোগ অনেক বেড়ে যাবে।
সুতরাং যে করেই হোক, আপনার ভিডিওটি যেনো দর্শকরা অন্তত অর্ধেক বা তার থেকে কিছুটা বেশি সময় ধরে দেখে সে চেষ্টা করুন। এমন কিছু করুন যাতে দর্শক আপনার ভিডিও দেখতে বাধ্য হয়।
৭. আপনার ভিডিও সবার সাথে শেয়ার করুন
বর্তমান দিনে সোশ্যাল মিডিয়া সাইটগুলো ব্যবহার করেন এমন মানুষ হয়তো অনেক কম আছে। আপনিও নিশ্চয়ই কোননা কোনো সোশ্যাল সাইটের সাথে সংযুক্ত রয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই আপনার একাউন্টে আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিওগুলো শেয়ার করুন।
আপনি যদি আপনার চ্যানেলের ভিডিও আপনার সোশ্যাল একাউন্টে শেয়ার করতে না পারেন তবে ধরে নিবেন আপনার ভিডিও আপনার পছন্দ হচ্ছে না। আর যে ভিডিও আপনার পছন্দ হচ্ছে না সে ভিডিও কি করে অন্যের পছন্দ হবে?
সুতরাং নিজের পছন্দ হচ্ছে এমন ভিডিও তৈরি করুন এবং সেটিকে বিভিন্ন সোশ্যাল প্লাটফর্মে শেয়ার করে দিন।
৮. ধৈর্য্য রাখুন
ইউটিউবিং করে, কয়েক দিন বা কয়েক মাসেই আপনি একজন ‘সফল ইউটিউবার’ হয়ে যাবেন এমনটা চিন্তা করা বাদ দিয়ে দিন। ইউটিউবে সফল হতে গেলে আপনাকে যথেষ্ট পরিমাণে ধৈর্য্য ধরে কাজ করে যেতে হবে। ধৈর্য্য না থাকলে এই পেশাটি আপনার জন্য নয়।
সর্বশেষ কথা: তাহলে আজকে আমরা ইউটিউবে সফল হওয়ার কয়েকটি টিপস সম্পর্কে জানতে পারলাম।
পরিশেষে বলব, যদি আপনি এই প্লাটফর্মে নিজের সফল ক্যারিয়ার দার করাতে চান, তবে ধৈর্য্য ধরে সব টিপস ফলো করে কাজ করতে থাকুন। তাহলে আপনি অবশ্যই একদিন সফল হতে পারবেন।
লেখা পাঠিয়েছে: অমিত চৌধুরী