ইসলামিক পোস্ট

তাহাজ্জুদ নামাজ পড়ার নিয়ম – বাংলা নিয়ত, দোয়া এবং পড়ার ফজিলত

তাহাজ্জুদ নামাজের আরবি নিয়ত

আপনি কি জানেন ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ? যদি না জানেন কোন সমস্যা নেই একদম দলীলসহ আমি আপনাকে জানিয়ে দিচ্ছি।

হযরত আবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত একটি হাদিসে এসেছেঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি। আফজালুস সালাতি বাদাল মাফরুদাতি সালাতুল লাইলি’ অর্থাৎ ফরজ নামাজের পর সবচেয়ে উত্তম নামাজ হলো তাহাজ্জুদের নামাজ।” – (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ)

উপরের হাদিসটি পড়ে অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন, তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব কতোটুকু। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে আমাদের মাঝে শতকরা ৯০% লোকই তাহাজ্জুদ নামাজ কিভাবে পড়তে হয় তা জানিনা। তাই আজ আমি তাহাজ্জুদের নামাজ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো, ইনশাআল্লাহ।

তাহাজ্জুদের নামাজ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও ফযিলতপূর্ণ ইবাদাত। হাশরের ময়দানে আল্লাহ তায়ালা তাঁর প্রিয় বান্দাদেরকে ডাক দিয়ে বলবেনঃ ”কোথায় তারা শেষরাত্রে যাদের পিঠ আমার ভয়ে বিছানা থেকে আলাদা হয়ে যেতো”। তখন অল্পসংখ্যক লোক দাঁড়িয়ে যাবে। আল্লাহ তায়ালা বলবেন তোমরা জান্নাতে চলে যাও, তোমাদের কোনো হিসেব নেই। তারপর তারা আনন্দচিত্তে জান্নাতের দিকে দৌড় দিবে।

প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা সব নামাজেরই কিছু না কিছু বৈশিষ্ট, নিয়ম, ইত্যাদি থাকে। তাহাজ্জুদ নামাজও এর বিপরীত নয়। তাই আজকে আমি তাহাজ্জুদ নিয়ে বিস্তারিতভাবে লিখার চেষ্টা করব। ইনশাআল্লাহ।

তাহাজ্জুদের নামাজ কী?

তাহাজ্জুদ এর শাব্দিক অর্থ হলো ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়া। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগে রাসূলে আরাবী সাঃ-এর উপর তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া বাধ্যতামূলক ছিলো। এমনকি নবিজী জিবনে কখনও তাহাজ্জুদের নামাজ কাজা করেননি।

তাহাজ্জুদের নামাজ নফল নাকি সুন্নাত?

প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার আগে আমাদের জেনে নিতে হবে এটা সুন্নাত নাকি নফল। তাহাজ্জুদের নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ নফল ইবাদাত। তবে অন্যান্য নফল থেকে এটি অন্যতম। তাহাজ্জুদের নামাজকে রাসূলে আরাবী সাঃ সর্বশ্রেষ্ঠ নফল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রাসূলে আরাবী সাঃ নিয়মিত তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। এমনকি স্বয়ং স্ত্রী এবং সাহাবীদেরকেও এ কাজে উৎসাহিত করতেন। কোরআনের হাদিসের বিভিন্ন জায়গায় এই নামাজের প্রতি তাগিদ দেয়া হয়েছে।

তাহাজ্জুদ নামাজের সময়

ইশার নামাজ আদায়ের পর থেকে নিয়ে সুবহে সাদিকের আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদের নামাজ পড়া যায়। তবে রাত্রের শেষভাগ হলো তাহাজ্জুদের সর্বোত্তম সময়।

তাহাজ্জুদের নামাজ কত রাকাআত?

তাহাজ্জুদের নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাআত পর্যন্ত পড়ার বর্ণনা পাওয়া যায়। অর্থাৎ সর্বনিম্ন ২ এবং সর্বোচ্চ ১২ রাকাআত (সাদ্ধ্য অনুযায়ী) পড়া যেতে পারে।যেহেতু রাসূলে আরাবী সাঃ তাহাজ্জুদের নামাজ কখনো ২ রাকাআত, কখনো ৪ রাকাআত, কখনো ৮ রাকাআত, এবং কখনো ১২ রাকাআত করেও আদায় করতেন, সেহেতু কেউ যদি ২ রাকাআতও আদায় করেন তবুও তার তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় হয়ে যাবে।

ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিতঃ ” যে ব্যক্তি ইশার নামাজের পর দুই বা ততোধিক রাকাআত নামাজ পড়ে নেয়, সে হবে তাহাজ্জুদের ফযিলতের অধিকারী।”

প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা এখন আমরা তাহাজ্জুদের নিয়ম নিয়ে জানবো ইনশাআল্লাহ।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ম

তাহাজ্জুদের নামাজ সাধারণ নামাজের মতই এর আলাদা কোন নিয়ম নেই। যেকোনো সূরা দিয়েই এই নামাজ আদায় করা যায়। রাসূলে আরাবী সাঃ যথাসম্ভব ক্বেরাত, রুকু, সিজাদাহ লম্বা করে একান্ত নিবিষ্ট মনে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করতেন। তাই তাহাজ্জুদের নামাজ লম্বা অর্থাৎ দীর্ঘসময় পর্যন্ত পড়া উত্তম।

তাহাজ্জুদের নিয়ত করবো কীভাবে?

জেনে রাখা ভালো যে, আমাদের সমাজে নিয়ত নিয়ে যে প্রথা চালু আছে অথবা ছোট ছোট নামাজ শিক্ষা বইয়ে যে নিয়ত দেওয়া আছে তা কোন কিতাবের সহীহ হাদিসে পাওয়া জায়নি। আমরা এগুলো পড়া থেকে বিরত থাকবো ইনশাআল্লাহ।

যেকোনো নামাজের নিয়ত আপনি এভাবে করতে পারেনঃ ” আমি ফজরের (যখন যেটা পড়বেন) দুই রাকাআত নামাজ আদায় করছি” আল্লাহু আকবার।

সূরা বনী ইসরাইলের ৭৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَمِنَ اللَّيْلِ فَتَهَجَّدْ بِهِ نَافِلَةً لَّكَ عَسَى أَن يَبْعَثَكَ رَبُّكَ مَقَامًا مَّحْمُودًا

রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্যে অতিরিক্ত। হয়ত বা আপনার পালনকর্তা আপনাকে মাকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন।

উপরে উল্লেখিত নিয়তটি যেকোনো নামাজের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। হোক সেটা ফরজ, সুন্নাত, নফল অথবা অন্য কোন নামাজ। তবুও আমি আপনাদের সুবিধার্থে তাহাজ্জুদের বাংলা নিয়ত নিম্নে উল্লেখ করেছি।

নিয়তঃ “আমি তাহাজ্জুদের দুই রাকাআত নামাজ আদায় করছি ” আল্লাহু আকবার।

তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়মঃ

  • সর্বপ্রথম নামাজের স্থানে দাঁড়িয়ে  নিয়ত করবে “আমি তাহাজ্জুদের ২ রাকাআত নফল নামাজ আদায় করছি।”
  • অতঃপর তাকবীরে তাহরিমা “আল্লাহু আকবার” বলে হাত বাঁধা।
  • অতঃপর ছানা পড়া।
  • সূরা ফাতিহা পড়া।
  • অন্য সূরা বা সূরার অংশবিশেষ বা ক্বেরাত পড়া।
  • অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু, সিজদাহ আদায় করা।
  • একই নিয়মে দ্বিতীয় রাকাআত আদায় করে তাশাহহুদ, দুরুদ শরীফ, দোয়ায়ে মা’ছুরা পাঠ করে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।

এভাবে ২ রাকাআত করে যার যত রাকাআত সম্ভব আদায় করা।

উপরে পড়ে এসেছেন যে, হাশরের ময়দানে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়কারী খুব কম সংখ্যক লোক মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, অতঃপর আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ক্ষমা করে দিবেন।

আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকেও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করার তাওফীক দান করুন “আমীন”।

প্রিয় মুসলিম ভাই ও বোনেরা যদি লেখাটি ভালো লেগে থাকে তাহলে আপনাদের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। হতে পারে আল্লাহ তায়ালা এটাকে আপনার নাজাতের উছিলা করে দিবেন।

সম্পর্কিত আর্টিকেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

অ্যাডব্লকার ডিটেক্ট হয়েছে!

মনে হচ্ছে আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমাদের সাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অ্যাড ব্লকার বন্ধ করতে হবে। যদি অ্যাডব্লকার ব্যবহার না করেন, তাহলে পেজটি রিফ্রেশ করুন।