মহান মে দিবস কি? কেন পালন করা হয়? মে দিবস কত সাল থেকে পালিত হয়?
জানুন শ্রমিক দিবস কেন পালিত হয়? মে দিবস কত সাল থেকে পালিত হয়? মে দিবসের ইতিহাস, প্রথম মে দিবস কোথায় পালিত হয়? শ্রমিক দিবস কবে ও ইত্যাদি মে দিবস সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর।
মহান মে দিবস কি?
আন্তর্জাতিক শ্রম দিবস যা সাধারণত মে দিবস নামে পরিচিত। এটি প্রতি বছর ১লা মে বিশ্বব্যাপী পালিত হয়।
এটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলন উদযাপনের একটি দিন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ ও শ্রমিক সংগঠনগুলো রাজপথে শোভাযাত্রার আয়োজন করে দিবসটি পালন করে। ১লা মে বাংলাদেশসহ বিশ্বের প্রায় ৮০টি দেশে একটি জাতীয় ছুটির দিন। অন্যান্য অনেক দেশে এটি ব্যক্তিগতভাবে পালিত হয়।
মে দিবস পালন করা হয় কেন? মে দিবসের ইতিহাস
মে দিবস শিকাগো শহরের ১৮৮৬ সালের হে মার্কেট গণহত্যার শহীদদের স্মরণ করে পালন করা হয়। সেই দিনে শ্রমিকরা দৈনিক আট ঘণ্টা কাজের দাবিতে হে মার্কেটে জড়ো হন। অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি তাদের ঘিরে থাকা পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা নিক্ষেপ করলে পুলিশ শ্রমিকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। এর ফলে প্রায় ১০-১২ জন শ্রমিক ও পুলিশ নিহত হয়।
ফরাসি বিপ্লবের শতবর্ষে ১৮৮৯ সালে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিকের প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। রেমন্ড ল্যাভিন ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দ থেকে বিভিন্ন দেশে শিকাগো বিক্ষোভের বার্ষিকী উদযাপনের প্রস্তাব করেছিলেন। ১৮৯১ খ্রিস্টাব্দে আন্তর্জাতিকের দ্বিতীয় কংগ্রেসে এই প্রস্তাব আনুষ্ঠানিকভাবে গৃহীত হয়। এর পরপরই ১৮৯৪ খ্রিস্টাব্দের মে দিবসের দাঙ্গা সংঘটিত হয়।
পরবর্তীতে, ১৯০৪ সালে আমস্টারডামে অনুষ্ঠিত সমাজতান্ত্রিকদের আন্তর্জাতিক সম্মেলনে এই বিষয়ে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়। এই প্রস্তাবে সমস্ত সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক দল এবং ট্রেড ইউনিয়নকে (ট্রেড ইউনিয়ন) মে দিবসের দাবিতে সারা বিশ্বে আট ঘণ্টা কর্মদিবস ও শান্তি প্রতিষ্ঠার দাবীতে সমাবেশ ও মিছিল করার আহ্বান জানানো হয়।
সেই সম্মেলনে, শ্রমিকদের হতাহতের সম্ভাবনা না থাকলে “বিশ্বব্যাপী সমস্ত শ্রমিক সংগঠন ১লা মে ‘বাধ্যতামূলক কাজ না করায়’ সম্মত হন।
এটি একটি সরকারি ছুটির দিন, এবং এটি অনেক দেশে কার্যকর হয়েছে। কিছু জায়গায় শিকাগো হে মার্কেটে শহীদ শ্রমিকদের স্মরণে আগুনও জ্বালানো হয়।
বাংলাদেশ এবং ভারতেও এই দিনটি যথাযথভাবে পালিত হয়ে আসছে। ভারতে প্রথম মে দিবস পালিত হয় ১৯২৩ খ্রিস্টাব্দে।
মে দিবস কত সাল থেকে পালিত হয়?
১৮৮৬ সাল থেকে মে দিবস পালিত হয়। এটি আন্তর্জাতিক শ্রমিক আন্দোলন উদযাপনের একটি দিন। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমজীবী মানুষ ও শ্রমিক সংগঠনগুলো রাজপথে শোভাযাত্রার আয়োজন করে দিবসটি পালন করে।
শ্রমিক আন্দোলন কি? ১লা মে কি হয়েছিল?
১৮৮৬ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোর হে মার্কেটের শ্রমিকরা উপযুক্ত মজুরি এবং আট ঘন্টা কর্মদিবসের দাবিতে একটি গণআন্দোলন করেছিল।
শ্রমিকের সারা জীবন গিলে খাচ্ছিল কারখানা। অসহনীয় পরিস্থিতিতে দিনে ১৬ ঘন্টা কাজ করতে হতো শ্রমিকদের।
পুরো এক সপ্তাহ কাজ করার পর শ্রমিকদের স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ে। কঙ্কাল হয়ে যেত শিশু শ্রমিকরা। তখন দাবি ছিল একজন কারখানার শ্রমিকের গোটা জীবন কেনা যাবে না।
৮ ঘণ্টা কর্মদিবসের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলনের মধ্যে ওই বছরের ১লা মে শ্রমিকরা ধর্মঘট করে। ওই সমাবেশে প্রায় তিন লাখ মেহনতি মানুষ অংশ নেয়।
আন্দোলনরত শ্রমিকদের থামাতে পুলিশ বাহিনী শ্রমিকদের মিছিলে নির্বিচারে গুলি চালায়। এতে পুলিশের গুলিতে ১১ জন নিরস্ত্র শ্রমিক নিহত, আরো অনেক শ্রমিক আহত ও গ্রেফতার হন।
পরে আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া ছয় শ্রমিককে প্রহসনমূলক বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।
জেলে থাকা অবস্থায় এক শ্রমিক নেতাও আত্মহত্যা করেছেন। বিক্ষোভ আরও দৃশ্যমান আকারে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে সেই আন্দোলন। পরে মার্কিন সরকার আন্দোলনরত শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়।
১৮৮৯ সালের ১৪ জুলাই ফ্রান্সে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলন ১লা মে কে শ্রমিক দিবস হিসাবে ঘোষণা করে। পরের বছর অর্থাৎ ১৮৯০ সাল থেকে ১লা মে বিশ্বব্যাপী ‘মে দিবস’ বা ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’ হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস
বাংলাদেশে শ্রমিক আন্দোলনের কথা আসলেই পাটকল শ্রমিকদের কথা মাথায় আসে। একসময় নারায়ণগঞ্জে আদমজী জুটমিল শ্রমিকদের যে প্রভাব ছিল তা এখন রূপকথার মতো।
১৯৭০-৮০ এর দশকে, শ্রমিক ধর্মঘট দেশের বিভিন্ন অংশে জীবনকে স্থবির করে দিয়েছিল।
১৯৯০ সালের পর শ্রমিক রাজনীতির ধরণ পরিবর্তন হতে শুরু করে। ব্যাপক অর্থনৈতিক সংস্কারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন খাত সংকুচিত হয়ে যাওয়া এবং বেসরকারি খাত সম্প্রসারিত হওয়ায় শ্রমিক আন্দোলনও পরিবর্তিত হতে শুরু করে।
নব্বইয়ের দশক থেকে বিভিন্ন সেক্টর বা সেক্টরভিত্তিক শ্রমিকদের তৎপরতা দেখা যায়। যেমন গার্মেন্টস শ্রমিক, পরিবহন শ্রমিক, পাটকল শ্রমিক। তাদের কোনো কেন্দ্রীয় ইউনিট সংগঠন নেই।
১৯৮০ এর দশকে শ্রমিক সংঘ ঐক্য পরিষদ বা SCOP নামে একটি কেন্দ্রীয় সংগঠন ছিল। এটি মূলত সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে গঠিত হয়েছিল।
কারণ শ্রমিক সংগঠনগুলো তখন ভেবেছিল, সামরিক শাসন ত্যাগ না করলে শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে না।
এই সংগঠনটি এখনো কাগজে কলমে টিকে আছে। কিন্তু কোনো তৎপরতা বা ভূমিকা দেখা যায় না।
বাংলাদেশে পোশাক শ্রমিকদের অধিকার বা আন্দোলনের বিষয়টি দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে সবার সামনে রয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের আন্দোলনের বিষয়টি শ্রমিক আন্দোলনে সবচেয়ে আলোচিত একটি বিষয়। বিভিন্ন সময়ে বেতনের দাবিতে বিচ্ছিন্নভাবে রাজপথে নেমে আসেন গার্মেন্টস শ্রমিকরা।
আশির দশক পর্যন্ত পাট ও টেক্সটাইল মিলের শ্রমিকরা সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারলেও এখন আর সে অবস্থা নেই। এখন এটি ভিন্ন খাতে চলে গেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিভিন্ন সময়ে শ্রমিকরা রাজপথে নামার কার্যকর উপায় বের করেছেন। কারণ অনেক ক্ষেত্রেই আলোচনার টেবিলে দরকষাকষির সুযোগ থাকেনা।
প্রথম মে দিবস কোথায় পালিত হয়?
উত্তরঃ আর্জেন্টিনায় প্রথম মে দিবস বা শ্রমিক দিবস পালন করা হয়।
শ্রমিক দিবস কত তারিখে?
উত্তরঃ প্রতি বছরের ১মে মাসের ১ তারিখকে শ্রমিক দিবস হিসেবে পালন করা হয়।
মে দিবস কত সাল থেকে পালিত হয়?
উত্তরঃ ১৮৮৬ সাল থেকে আমেরিকায় মে দিবস পালন করা হয়।
ভারতে প্রথম কবে ও কখন মে দিবস পালন করা হয়?
উত্তরঃ ভারতে প্রথম মে দিবস পালিত হয়েছিল ১৯২৩ সালের ১লা মে।
বাংলাদেশে প্রথম কবে ও কখন মে দিবস পালন করা হয়?
উত্তরঃ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে মহান মে দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে মে দিবসকে জাতীয় দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকে যথাযথ মর্যাদায় পালিত হয় মে দিবস।
শেষ কথাঃ এই আর্টিকেলে ১লা মে বা শ্রমিক দিবসের ইতিহাস ও শ্রমিক দিবস সমর্কিত কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে। আর্টিকেলে দেয়া তথ্যগুলো উইকিপিডিয়া, বিবিসি বাংলাসহ বিশ্বের বেশ কিছু জনপ্রিয় সোর্স থেকে নেয়া হয়েছে।
অবশ্যই আমরা নিজেরা ইতিহাস বিকৃত করিনা এবং কাউকে বিকৃত করতে উৎসাহিতও করিনা। আর্টিকেলে কোন প্রকার ভুল পেলে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। ধন্যবাদ।