সেহরির দোয়া ও নিয়ত বাংলা ও আরবি উচ্চারণ সহ
জানুনঃ সেহরির দোয়া কিভাবে পড়বেন, রোজা রাখার জন্যে সেহরির দোয়া পড়তে হবে কিনা ও সেহরির নিয়ত বাংলা।
আসসালামু আলাইকুম, আপনারা সবাই কেমন আছেন? আশা করি ভালো আছেন। প্রত্যেক মুসলমানের জনয রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ ইবাদত। তাই সকলের উচিৎ সঠিকভাবে রোজা রাখার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি আদায় করা।
আজকে এই পোস্টে সেহরির দোয়া ও নিয়ত বাংলা ও আরবি উচ্চারণ সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো। চলুন তাহলে দেরি না করে আজকের এই পোস্ট টি শুরু করার যাক।
রমজান মাসে রোজা রাখা ফরজ। হিজরতের দেড় বছর পর স্বয়ং আল্লাহ তাআলা রোজা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
‘তোমারদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে- যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর ফরজ করা হয়েছিল। যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
রোজা রাখার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহর নৈকট্য লাভ করে। বিপুল সওয়াব ও অনুকম্পায় ঋদ্ধ করে। রাসুল (সা.) বলেন,
‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে আল্লাহ তাআলা তার আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ১৯০১; তিরমিজি, হাদিস : ৬৮৩)
রোজা পালনে সাহরি ও ইফতার গুরুত্বপূর্ণ তেমনি রোজার নিয়তও জরুরি। তবে রোজা রাখার উদ্দেশ্যে আপনি যখন ঘুম থেকে উঠে সেহেরি খান, তখন এই খাওয়াটাই রোজার নিয়তের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
বস্তুত মনের ইচ্ছাই হলো নিয়ত। নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা জরুরি নয়। তাই কেউ মুখে নিয়ত না করলেও তার রোজাগুলো আদায় হয়ে যাবে। (সূত্র : আল-বাহরুর রায়েক : ২/৪৫২; আল-জাওহারুতুন নাইয়্যিরাহ : ১/১৭৬; রাদ্দুল মুহতার : ৩/৩৩৯, ৩৪১; ফাতাওয়া হিন্দিয়া : ১/১৯৫)
সেহরিতে রোজার নিয়ত কি করতেই হবে?
হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, “সব আমল নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর প্রত্যেক ব্যক্তি তা-ই পাবে, যা সে নিয়ত করবে।” এই হাদিস দ্বারা নিয়ত কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা স্পষ্টভাবেই বুঝা যায়।
রোজা রাখার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা, তাই অবশ্যই রোজা রাখার জন্যে রোজার নিয়ত গুরুত্বপূর্ণ। যেহেতু আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখছেন, তাই অবশ্যই আপনাকে রোজার নিয়ত করতে হবে। নয়তো সেই রোজা আল্লাহর কাছে ইবাদত হিসেবে গণ্য হবেনা।
সেহরির নিয়ত আরবিতেই করতে হবে?
সেহরির নিয়ত আরবিতেই করতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই। আপনি রোজা রাখবেন মনে মনে স্থির করেছেন এতেই আপনার নিয়ত হয়ে গেছে।
সেহরিতে বাংলায় নিয়ত করলে হবে?
সেহরির নিয়ত বাংলায় বা আরবিতে করতেই হবে এমন কোন নিয়ম নেই। নিয়ত মানে ইচ্ছা করা। আপনি রোজা রাখবেন ইচ্ছা করলেই আপনার নিয়ত হয়ে যাবে।
রমজানে রোজার রাখার জন্যে নিয়ত থাকতে হবে, তবে এর মানে এই নয় যে আপনাকে মূখে উচ্চারণ করে নিয়ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে নিয়ত হয় অন্তর থেকে, মূখ দিয়ে নয়। তাই নিয়ত মূখেই উচ্চারণ করতে হবে এমন কোন নিয়ম নেই।
সেহরির সময় রোজার যে নিয়ত প্রচলিত
বাংলাদেশে বিভিন্ন নামাজ শিক্ষা বই ও ক্যালেন্ডারে রোজার নিয়ত উল্লেখ থাকে, যেগুলো আমরা নিচে উল্লেখ করেছি। তবে মনে রাখবেন, এসব নিয়তের দোয়া ছাড়াই আপনার রোজা হয়ে যাবে।
যদি আপনি মনে মনে নিয়ত করেন যে আজ রোজা রাখবেন, এতেই আপনার রোজার নিয়ত হয়ে যাবে।
রোজার নিয়ত বাংলা
রোজা রাখার নিয়ত যে আরবিতে পাঠ করতে হবে তা কিন্তু নয়। আপনি চাইলে নিজের ভাষায় নিয়ত করে রোজা রাখতে পারেন। আপনি চাইলেই এভাবে নিয়ত করতে পারেনঃ আমি আজ রোজা রাখার নিয়ত করলাম। ( জাওয়াহিরুল ফিকাহঃ ১ খণ্ড, পৃষ্ঠাঃ ৩৭৮)
রোজার নিয়ত আরবি উচ্চারণঃ
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
রোজার নিয়ত বাংলা উচ্চারণঃ
নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
রোজার নিয়তের বাংলা অর্থঃ
হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজানের তোমার পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরজ রোজা রাখার ইচ্ছা পোষণ (নিয়্যত) করলাম। অতএব তুমি আমার পক্ষ থেকে (আমার রোজা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকাকে) কবুল কর, নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞানী।
সেহরির দোয়া ও নিয়ত নিয়ে শেষ কথা
আশা করি সেহরির দোয়া ও নিয়ত সম্পর্কে আপনি জানতে পেরেছেন। মনে রাখবেন, সেহরির সময় রোজা রাখার জন্যে দোয়া করা জরুরি নয়। রোজা রাখার জন্যে নিয়ত সবচাইতে জরুরি ।
আপনি সেহরি খাওয়ার জন্য ঘুম থেকে জাগ্রত হয়েছেন, এর মানে আপনি রোজা রাখার জন্যেই সেহরি খাচ্ছেন, সুতরাং এতেই আপনার নিয়ত হয়ে গেছে। আল্লাহ সবাইকে সঠিক বুঝার তৌফিক দান করুন, আমিন।