ঈদুল আজহার সুন্নত আমল – কুরবানী ঈদের আমল
ঈদুল আজহার সুন্নত আমল, ঈদুল আজহায় যা বর্জনীয়, ঈদের দিনের সুন্নত ও মোস্তাহাবসমূহ।
ঈদুল আজহার সুন্নাত আমলঃ ঈদের দিনে নামাজ পড়ার আগে গোসল করা সুন্নত। উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নত। সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। ঈদের দিনে বিশ্বনবী বিশেষভাবে সুগন্ধি ব্যবহার করতেন। বিশ্বনবীর তিনটি পছন্দীয় জিনিসের মাঝে একটি হলো সুগন্ধি। তাই ঈদের দিনে পোশাক পরিধানের পরে সুগন্ধি ব্যবহার করা চাই।
ঈদুল আজহার নামাজের আগে কিছু না খাওয়া মুস্তাহাব। নবী করিম (সা.) ঈদুল আজহার দিনে কিছুই খেতেন না, যে পর্যন্ত ঈদের নামাজ আদায় করতেন। (তিরমিজি, ইবনে মাজাহ)
ঈদ্গাহে এক পথে যাওয়া এবং অন্য পথে বাড়ি ফেরা সুন্নত। (বুখারি, হাদিসঃ ৯৮৬)
সম্ভব হলে ঈদ্গাহে হেঁটে যাওয়া ও সুন্নত। (ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ১০৭১)
ঈদের দিন তাকবির পাঠের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালাকে বেশি বেশি স্মরণ করা সুন্নত। পুরুষেরা এ তাকবির উঁচু আওয়াজে পাঠ করবে এবং মহিলারা নীরবে। তাকবির জিলহজ মাসের ৯ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত পাঠ করবে। (ফাতহুল বারিঃ ২\৫৮৯ )
ঈদের নামাজ সুন্নত মুয়াক্কাদাহ। ঈদের নামাজ সব নফল নামাজের মাঝে ফজিলতপূর্ণ। ঈদের নামাজের আগে ও ফজরের নামাজের পরে কোনো নামাজ নেই। ঈদের নামাজের কোনো আজান নেই এবং ইকামত নেই।
ঈদের দিনে বড়-ছোট সবার সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত। ঈদের দিনে সাহাবায়ে কিরামদের সম্ভাষণ ছিলো, তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা। (অর্থঃ আল্লাহ আমাদের ও তোমার কাজ কবুল করুন)।
ঈদুল আজহার দিনে সামর্থ্যবানদের কোরবানি দেওয়া ওয়াজিব। কোরবানি দেওয়া পশুর গোশত নিযে খাবে, নিজের পরিবারবর্গকে খাওয়াবে, আত্মীয়-স্বজনিকে হাদিয়া তোহফা দিবে এবং গরীব-মিসকিনকে দান করবে।
ঈদুল আজহায় পশুর রক্ত, আবর্জনা ও হাড়ের কারণে যেন পরিবেশ দূষিত না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কোরবানি শেষ হওয়ার সাথে সাথে রক্ত, আবর্জনা এবং হাড় নিরাপদ দূরত্বে ফেলে দিতে হিবে।
ঈদুল আজহায় যা বর্জনীয়
ঈদুল আজহায় যা বর্জনীয়ঃ ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন। ঈদের দিনকে কবর জিয়ারতের বিশেষ দিন মনে করে কবর জিয়ারত করা বিদআত। তবে পূর্বনির্ধারিত রুটিন ছাড়া হঠাৎ সুযোগ হয়ে গেলে একাকী কেউ কবর জিয়ারত করা দূষণীয় নয়।
অনেকে ঈদের আনন্দে মশগুল হয়ে নতুন জামাকাপড় পরিধান, সেমাই, ফিরনি ঈত্যাদি নিয়া ব্যস্ত হয়ে পরেন যার কারণে ঈদের নামাজের কথা ভুলে যান। কিন্তু এই ঈদের সালাত ও কোরবানি করাই হচ্ছে মুসলমানদের মূল কাজ।
ঈদ্গাহে বা ঈদের দিন সাক্ষাৎ হলে মুসাফাহা ও মুয়ানাকা করতেই হবে এমন বিশ্বাস ও আমল করা বিদয়াত। তবে এমন বিশ্বাস না করে সালাম ও মুসাফাহা পর গলায় গলা মেলানো কোনো অসুবিধা নেই। কারণ মুসাফাহা ও মুয়ানাকা করার মাধ্যমে পারস্পারিক সম্পর্ক বৃদ্ধি হয়।
কোরবানি গোসত, চামড়া ও এর কোনো অংশ বিক্রি করা যাবে না। এমনকি কসাইকে পারিশ্রমিক স্বরূপ গোসত দেওয়া নিষিদ্ধ (বুখারি, হাদিসঃ ১৭১৭, মুসলিম, হাদিসঃ ১৩১৭) কিন্তু সাধারনভাবে কাউকে খেতে দেওয়ায় অসুবিধা নেই।
ঈদের দিন উপলক্ষে যেখানে গান-বাজনা, অবাধে নারী-পুরুষ বিচরণ ইত্যাদি আয়োজন থাকে এমন মেলা আয়োজন করা বা অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা দেওয়া সুম্পূর্ণ হারাম।
ঈদের দিনের সুন্নত ও মোস্তাহাবসমূহ
ঈদের দিনের কিছু আমলও রয়েছে। ঈদের দিনের কিছু সুন্নত ও মোস্তাহাব আমল এখানে তুলে ধরা হলো।
- ভোরে উঠে নিজ এলাকার মসজিদে ফজর নামাজ জামাতে আদায় করে দৈহিক ও মানসিকভাবে ঈদের নামাজ আদায় করার প্রস্তুতি গ্রহণ করা।
- মিসওয়াক করাসহ ভালোভাবে গোসল করা।
- সুগন্ধি ব্যবহার করা।
- সাধ্যানুযায়ী সুন্দর, পবিত্র ও উত্তম পোশাক পরিধান করা।
- সাদকাতুল ফিতর যার ওপর ওয়াজিব তা ঈদের নামাজের পূর্বেই আদায় করা।
- ঈদগাহে যথাশীঘ্র আগে যাওয়া
- সামর্থ্য অনুযায়ী দান-খয়রাত করা।
- ঈদুল ফিতর নামাজের আগে কিছু খাওয়া এবং ঈদুল আজহায় কোরবানির পর খাওয়া।
- পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া।
- ঈদগাহে এক রাস্তায় যাওয়া এবং অন্য রাস্তায় আসা।
- ধীরস্থিরভাবে ঈদগাহে যাওয়া।
- ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার সময় নিঃশব্দে এই তাকবির পড়া- ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’ ঈদুল আজহার দিন ঈদগাহে যাওয়ার সময় এই তাকবিরটি উচ্চস্বরে পড়া মোস্তাহাব।
- চলতে ফিরতে ‘তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ (আল্লাহতায়ালা আমাদেরকে ও আপনাদেরকে কবুল করুন) -এই বাক্য দ্বারা অপর মুসলমানদেরকে অভ্যর্থনা জানাবে।
- কোরবানি ঈদের দিন যে লোক নিজের পক্ষ থেকে কোরবানি করবে, তার জন্য ঈদের নামাজ ও কোরবানির জন্তু জবেহ করার পর নখ ও লোম কাটা মোস্তাহাব। এতে করে হাজিদের সাথে তার সামঞ্জস্য ঘটে।