Deprecated: Hook custom_css_loaded is deprecated since version jetpack-13.5! Use WordPress Custom CSS instead. Jetpack no longer supports Custom CSS. Read the WordPress.org documentation to learn how to apply custom styles to your site: https://wordpress.org/documentation/article/styles-overview/#applying-custom-css in /home/globckub/public_html/banglatechspot.com/wp-includes/functions.php on line 6078
কোরবানির বিধিবিধান ও কুরবানির পশু বাছাইয়ের নিয়ম
ইসলামিক পোস্ট

কোরবানির বিধিবিধান ও কুরবানির পশু বাছাইয়ের নিয়ম

এই আর্টিকেল কোরবানির বিধিবিধান ও কুরবানির পশু বাছাইয়ের নিয়মসহ কুরবানি সম্পৃক্ত বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে।

সূচিপত্র দেখুন

কুরবানি অর্থ কি?

কোরবানির আভিধানিক অর্থ হলো কাছে যাওয়া বা নৈকট্য অর্জন করা। ইসলামিক পরিভাষায় কোরবানি মানে জিলহজ মাসের দশ তারিখ সকাল থেকে বারো তারিখ পর্যন্ত আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য শরিয়তের বিধান অনুসারে নিদির্ষ্ট পশু জবাই করা।

কোরবানির বিধিবিধান ও কুরবানির পশু বাছাইয়ের নিয়ম

কোরবানি কার উপর ওয়াজিব?

স্বাভাবিক জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিম যদি কোরবানি ঈদের তিন দিন এর মাঝে সাহেবে নিসাব যার মানে সাড়ে সাত ভড়ি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভড়ি রূপা অথবা যেকোনো একটি মূল্যের সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা ব্যবসার মালিক হয়ে থাকেন তার জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব হবে।

সাহেবে নিসাব তথা সামর্থন্যবানব্যক্তির হাতে নগদ অর্থ না থাকলে আপাতত ধার করে হলেও কোরবানি আদায় করতে হবে। একটি কোরবানি মানে হলো একটি ছাগল, একটি গরু বা একটি ভেড়া অথবা একটি দুম্বা, মহিষ ও উটের সাত ভাগের এক ভাগ। আপনারা চাইলে একটি গরু, মহিষ বা উট সাতজন শরিক হয়ে বা সাত নামে কোরবানি করতে পারবেন।

কোরবানি কোন ধরণের পশু দ্বারা করা যায়?

মূলত গৃহপালিত পশু দ্বারা কোরবানি করতে হয়। ছয় প্রকার পশু দ্বারা কোরবানি করা যায় যেমনঃ গরু, মহিষ, উট, ভেড়া, ছাগল এবং দুম্বা। এই পশু ছাড়া আপনি অন্যকোনো পশু দ্বারা কোরবানি করতে পারবেন না। এই ধরনের পশুকে কোরআনের ভাষায় বলা বাহিমাতুল আনআম যার অর্থ অহিংস্র গৃহপালিত চতুষ্পদ জন্তু।

আরও পড়ুনঃ  কোরবানির ফজিলত ও প্রতিদান

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কোরবানি নিয়ম নির্ধারণ করে দিয়েছি। জীবনোপকরণ স্বরূপ তাদের যেসব বাহিমাতুল আন আম দিয়েছি সেগুলোর উপর তারা জেনো আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে। তোমাদের মাবুদ একই মাবুদ তাই তোমরা তারই আনুগত্য করবে। আর সুসংবাদ দেও বিনীতদেরকে (সূরা হজ, আয়াত ৩৪) ।

কোরবানির পশুর সর্বনিম্ন বয়স কত লাগবে?

কোরবানির পশু কেমন হবে এ সম্পর্কে হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা চেষ্টা করবে কোরবানি জন্য নিদির্ষ্ট বয়সের পশু নির্বাচন করতে। যদি না পাও তাহলে চয় মাসের দুম্বা কোরবানি করতে পারো (মুসলিম)।

কোরবানির জন্য ছাগল, ভেড়া এবং দুম্বার বয়স এক বছর হতে হবে। গরু ও মহিষের জন্য দুই বছর এবং উটের জন্য পাঁচ বছর হতে হবে। দুম্বার বয়স যদি এক বছর না হয় কিন্তু দেখতে একবছরের মতো হৃষ্টপুষ্ট হয় তাহলে কোরবানি দিতে পারবেন।

অসুস্থ পশু কুরবানি দেয়া যাবে কি?

উল্লিখিত পশু গুলোর নর বা মাদি যাই হোক না কেনো আপনি কোরবানি দিতে পারবেন। কিন্তু কোরবানির জন্য তরতাজা এবং হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম। কোনো খুঁত থাকলে সেই পশু দ্বারা কোরবানি করা যাবে না। কোরবানির পশু হতে হবে দোষ এবং ত্রুটিমুক্ত।

পশুর মধ্যে যেসব সমস্যা বা ত্রুটি থাকলে কোরবানি দেওয়া যাবে নাঃ

  • দৃষ্টিশক্তি না থাকা
  • কানের বেশির ভাগ কাটা
  • জন্মগতভাবে কান না থাকা
  • অত্যন্ত দুর্বল এবং জীর্ণ-শীর্ণ হওয়া
  • শ্রবণশক্তি না থাকা
  • এই পরিমাণের লেংড়া যে জবাই করার স্থানে হেঁটে যেতে অক্ষম
  • লেজের বেশির ভাগ অংশ কাটা
  • গোড়াসহ শিং উপড়ে যাওয়া
  • বেশির ভাগ দাত না থাকা
  • পাগল হওয়ার কারণে ঘাসপানি ঠিক মতো না খাওয়া
  • গরু বা মহিষের চারটি দুধের মাঝে যেকোনো দুইটি কাটা
  • রোগের কারণে স্তনের দুধ শুকিয়ে যাওয়া
  • ছাগলের দুটি দুধের মাঝে একটি কাটা।
আরও পড়ুনঃ  কোরবানির দোয়া জেনে নিন

কোরবানি পশু বড় ধরনের ত্রুটিমুক্ত হতে হবে। তবেই আপনি সেই পশুকে কোরবানি দিতে পারবেন।

কোন ধরণের পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবেনা?

হাদিসে এসেছে চার ধরনের পশু দিয়ে কোরবানি জায়েজ হবে না। সেগুলো হলোঃ অন্ধ, রোগাক্রান্ত, পঙ্গু এবং যার কোনো অঙ্গ ভেঙ্গে গেছে (ইবনে মাজাহ, হাদিসঃ ৩১৪৪)।

যেসব সমস্যা বা ত্রুটি থাকলেও পশু কোরবানি দেয়া যাবেঃ

  • জন্মগতভাবে শিং নেই
  • শিং আছে তবে ভাঙ্গা
  • কান আছে কিন্তু ছোট
  • পশুর গায়ে চর্মরোগ
  • কিছু দাঁত নেই কিন্তু বেশির ভাগ আছে
  • পশু বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে বাচ্চা জন্মদানে অক্ষম
  • লেজ বা কানের কিছু অংশ কাটা কিন্তু বেশির ভাগ অংশ আছে
  • পশুটি পাগল, তবে ঘাস-পানি ঠিক মতো খায়
  • পুরুষাঙ্গ কেটে যাওইয়ার কারণে সঙ্গমে অক্ষম।

কিন্তু সর্ব উত্তম হচ্ছে ত্রুটিমুক্ত পশু দিয়ে কোরবানি করা। ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারা কোরবানি করা অনুচিত।

কোরবানির পশু কারা জবাই করতে পারবে?

কোরবানির পশু যেকোনো মুসলমান ভাইয়েরা জবাই করতে পারবেন। নিজের কোরবানি পশু নিজেই জবাই করা উত্তম। সেক্ষেত্রে দোয়া জানা জরুরি নয় নিজে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে করাবেন। জবাইয়ের সময় নিজে সেখানে থাকা ভালো।

কি কোরবানি দিলে একটি কোরবানি হিসেবে গণ্য হবে?

একটি কোরবানি মানে হলো একটি ছাগল, একটি ভেড়া, একটি দুম্বা কোরবানি করা। গরু, মহিষ এবং উট সাত নামে কোরবানি করা যায়।

আর আকিকা হলো একটি বা দুটি ছাগল কোরবানি করা। গরু, মহষ এবং উটের যেভাবে সাত ভাগ কোরবানি করা যায় ঠিক তেমনি সাত ভাগ ধরে এক অংশ আকিকা দেওয়া যায়। কোরবানি এবং আকিকা একসাথে দিতে কোনো বাধা নেই।

আরও পড়ুনঃ  কুরবানির পশু জবাই করার নিয়ম, পদ্ধতি ও দোয়া

ওয়াজিব এবং নফল কোরবানির গোশত কি সবাই খেতে পারবে?

ওয়াজিব এবং নফল কোরবানির গোশত খাওয়া যায় এবং খাওয়ানো যায়। এই গোশত সবাই খেতে পারবে। কিন্তু উত্তম হলো তিন ভাগের এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের দেওয়া। একভাগ গরিব-মিসকিন, পাড়া-প্রতিবেশীদের দেওয়া এবং একভাগ নিজের পরিবারের জন্য রাখা।

নারীদের নামে কোরবানি দেয়া যাবে কিনা?

ওয়াজিব কোরবানি ছাড়া ছোট, বড়, জীবিত, মৃত যে করও পক্ষ থেকে যে কেউ নফল কোরবানি আদায় করতে পারবেন। তাতে উভয়েই সওয়াবের অধিকারী হবেন। নারী যদি সামর্থন্যবান বা সাহেবে নিসাব হন তার জন্যও কোরবানি ওয়াবিজ।

শিশু ও হিজড়াদের উপর কি কুরবানী ওয়াজিব?

শিশুদের উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। তৃতীয় লিঙ্গ বা হিজড়ারা যেহেতু নারী ও পুরুষ উভয় কাতারেই পরে তাই তারাও প্রাপ্তবয়স্ক এবং সামর্থ্যবান হলে নামাজ, রোজা, হজ, যাকাতের মতো কোরবানিও ওয়াজিব হবে।

কুরবানি নিয়ে কুসংস্কার

অনেকেই মনে করে কোরবানি পশুর শিং ঘরের সামনে ঝুলিয়ে রাখলে বাড়ি-ঘর নিরাপদ থাকে, কিন্তু এটা ভুল ধারণা। কোরআন, হাদিস ও বিজ্ঞানে এর কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যাইনি।

তাছাড়া কোরবানির পশুর রক্ত পায়ে লাগালে পায়ের তলার ক্ষত সেরে যায় এসব ধারণা ভুল। এ বিষয় কোরআন বা হাদিস সমর্থিত নয়।

অসুস্থ থাকলেও কি কুরবানির গোশত খাওয়া লাগবে?

মূলত সামর্থ্যবানের জন্য কোরবানি করা ওয়াজিব, কিন্তু গোশত খাওয়া ওয়াজিব নয়। শারীরিক বা অন্য কনো অসুবিধা না থাকলে কোরবানির গোশত খাওয়া এবং খাওয়ানো সুন্নত।

কোরবানির মাংস বন্টনের নিয়ম

কোরবানির মাংস বণ্টনের উত্তম নিয়ম হলো তিন ভাগের এক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের দেওয়া। একভাগ গরিব-মিসকিন, পাড়া-প্রতিবেশীদের দেওয়া এবং একভাগ নিজের পরিবারের জন্য রাখা।

কোরবানী দেয়ার উদ্দেশ্য যা আপনার থাকতে হবে

সঠিকভাবে কোরবানি করার জন্য বেশি দাম দিয়ে পশু কেনার কোনো মাহাত্ব নেই। এসব কাজ যারা করে তারা কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য বুঝতে না পেরেই তা করে থাকে।

আল্লাহকে ভালোবেসে তার রাস্তায় ত্যাগের দৃষ্টান্ত হিসেবে আমি কোরবানি করছি এমন উপলব্ধি হৃদয়ে স্থান না পেলে সে কোরবানি শুধু পশু জবাই করা মাংস খাওয়ার ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে।

আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে স্পষ্ট বলেছেন, কোরবানির পশুর মাংস, রক্ত কিছুই আল্লাহর দরবারে পৌঁছে না। একমাত্র তাকওয়া পৌছে। যদি এই তাকওয়া উপস্থিতি না থাকে তাহলে কোরবানির কোনো সার্থকতা নেই।

কোরবানি নিয়ে শেষ কথা

আশা করি আমাদের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনারা জানতে পারবেন কোরবানির বিধিবিধান এবং পশু বাছাইয়ের সঠিক নিয়ম। আমাদের আর্টিকেলটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। সবাই ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।

সম্পর্কিত আর্টিকেল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

অ্যাডব্লকার ডিটেক্ট হয়েছে!

মনে হচ্ছে আপনি অ্যাড ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমাদের সাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অ্যাড ব্লকার বন্ধ করতে হবে। যদি অ্যাডব্লকার ব্যবহার না করেন, তাহলে পেজটি রিফ্রেশ করুন।