রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার উম্মাতের জন্য জান্নাতে যাওয়ার জন্য অনেক আমলের বর্ণনা দিয়েছেন। এই আমলগুলো করলে বান্দার অপারাধ ও পাপ মুক্ত হবে এবং জান্নাতে যাবে। এই আমল গুলোর মাধে ৫টি আমল হলো অন্যতম। সেগুলো নিচে দেওয়া হলোঃ
সাইয়েদুল ইস্তেগফার – জান্নাতে যাওয়ার আমল
যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে সকালে এই আমলটি করবে এবং সন্ধ্যায় মৃত্যু বরণ করবে সে জান্নাতি হবে। আর কেউ যদি রাতের প্রথম ভাগে দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে এই আমলটি করে এবং ভোর বেলায় মারা যায় তাহলে সে জান্নাতি। (বুখারি)
আরবি উচ্চারণঃ
أَللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ
বাংলা উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা আনতা রব্বী লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খালাক্বতানী, ওয়া আনা ‘আবদুকা ওয়া আনা ‘আলা ‘আহদিকা ওয়া ওয়া‘দিকা মাসতাত্বা‘তু, আ‘ঊযুবিকা মিন শার্রি মা ছানা‘তু। আবূউ লাকা বিনি‘মাতিকা ‘আলাইয়া ওয়া আবূউ বিযাম্বী ফাগফিরলী ফাইন্নাহূ লা ইয়াগফিরুয্ যুনূবা ইল্লা আনতা।
বাংলা অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার পালনকর্তা। তুমি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার দাস। আমি আমার সাধ্যমত তোমার নিকটে দেওয়া অঙ্গীকারে ও প্রতিশ্রুতিতে দৃঢ় আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হ’তে তোমার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমি আমার উপরে তোমার দেওয়া অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমি আমার গোনাহের স্বীকৃতি দিচ্ছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত পাপসমূহ ক্ষমা করার কেউ নেই’।
কালেমা শাহাদাত পড়া – জান্নাতে যাওয়ার আমল
হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে কোনো মুসলিম ব্যক্তি উত্তমরূপে অজু করার পর কালেমা শাহাদাত বলে, তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজা খুলে দেওয়া হবে। সে তার ইচ্ছে মতো যে কোনো দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। (ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ)
আরবি উচ্চারণঃ
أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
বাংলা উচ্চারণ : আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহ্দাহু লা-শারিকালাহু ওয়াশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।
বাংলা অর্থ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ ইবাদতের উপযুক্ত না এবং আল্লাহর কোন অংশীদার নেই। আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ(সাঃ ) আল্লার শ্রেষ্ঠ বান্দা এবং আল্লাহ প্রেরিত রসূল।
আজানের উত্তর দেয়া – জান্নাতে যাওয়ার আমল
হযরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু যখন আজান থামালেন তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বসের সঙ্গে হযরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু এর মতো বলবে সে বেহেশতে প্রবেশ করবে। ( নাসাঈ, মেশকাত)
হযরত অমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমাদের মাধে কেউ যদি মুয়াজ্জিনের-
- আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার এর জবাবে আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার বলে, এবং
- আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর জবাবে আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে, এবং
- আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ এর জবাবে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ বলে, অতপর
- হাইয়্যা আলাস সলাহ এর জবাবে লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলে, এবং
- হাইয়্যা আলাল ফালাহ এর জবাবে লা হাওয়া ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ বলে, অতঃপর যদি আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার এর জবাবে আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার এবং লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর জবাবে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলে তাহলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (আবু দাউদ, মুসলিম)
আয়াতুল কুরসি – জান্নাতে যাওয়ার আমল
হজরত আবু উমামা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, ওই ব্যক্তির জন্য জান্নাতে প্রবেশ করা মৃত্যু ছাড়া আর কোনো কিছু বাধা থাকবে না।’ (বুখারি, নাসাঈ, তাবারানি)
আরবি উচ্চারনঃ
اللّهُ لاَ إِلَـهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ لاَ تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلاَ نَوْمٌ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلاَّ بِإِذْنِهِ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلاَ يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلاَّ بِمَا شَاء وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالأَرْضَ وَلاَ يَؤُودُهُ حِفْظُهُمَا وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল ক্বাইয়্যুম। লা তাঅ খুযুহু সিনাতুঁও ওয়া লা নাওম। লাহু মা ফিস্ সামাওয়াতি ওয়া মা ফিল আরদ্বি। মাং জাল্লাজি ইয়াশফাউ ইংদাহু ইল্লা বি-ইজনিহি। ইয়ালামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়া মা খালফাহুম, ওয়া লা ইউহিতুনা বিশাইয়্যিম্ মিন ইলমিহি ইল্লা বিমা শাআ ওয়াসিআ কুরসিইয়্যুহুস্ সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বি, ওয়া লা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুওয়াল ‘আলিয়্যুল আজিম।’
৪০ রাত জামাআতে ইশার নামাজ পড়া – জান্নাতে যাওয়ার আমল
হজরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন- ‘যে ব্যক্তি মসজিদে এসে জামাআতের সঙ্গে ৪০ রাত তাকবিরে উলাসহ ইশার নামাজ পড়বে, তার বিনিময়ে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে তার মুক্তির সনদ লিখে দেন।’ (ইবনে মাজাহ)
শেষ কথাঃ আল্লাহ তায়ালা সকল মুসলিমদের জান্নাতের যাওয়ার এই আমলগুলো যথাযথভাবে আদায় করার তৌফিক দান করুন। এসব আমল আদায়ের মাধ্যমে সবাইকে পাপমুক্ত করুন ও জান্নাত লাভ কবুল করুন, আমিন।
ইসলামিক আরও আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন। আল্লাহ হাফেজ।