জুমার দিনের ১১টি আমল জেনে নিন
জানুনঃ জুমার দিনের আমল, জুমার দিনের ১১টি আমল, জুমার দিনের সুন্নত আমল, জুমার দিনের আমল ও ফজিলত, জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত।
মুসলমানদের জন্যে জুমার দিন একটি মর্যাদাপূর্ণ দিন। মহান আল্লাহ তায়ালা জুমার দিনটিকে পৃথিবীর সেরা তাৎপর্য দিবস হিসেবে বিশেষ মর্যাদায় ভুষিত করেছেন।
পবিত্র জুমার দিনে মুসলিমদের জন্য বিশেষ কিছু আমল রয়েছে। আজকের আর্টিকেলে জুমার দিনের ১১টি সুন্নত আমল সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। চলুন জেনে নেই জুমার দিনের ১১টি আমল সম্পর্কে।
জুমা অর্থ কি?
সালাতুল জুমা ইসলামের অন্যতম একটি নামাজ। জুমু’আহ শব্দটি আরবি যার অর্থ হচ্ছে সম্মিলিত হওয়া, একত্রিত হওয়া, কাতারবদ্ধ হওয়া।
যেহেতু শুক্রবারে সকল প্রাপ্তবয়স্ক মুমিন মুসলিম একটি নির্দিষ্ট সময়ে একই জায়গায় একত্রিত হয়ে যুহরের নামাজ জামাতের সাথে যুহরের পরিবর্তে এই নামাজ ফরয হিসেবে আদায় করে, তাই এই নামাজকে জুমার নামাজ বলে।
জুমাবারের ইতিহাস
রাসুল সাঃ যখন মদিনায় গেলেন, তখন একবার মদিনার আনসার সাহাবিরা রাসুল সাঃ কে নিয়ে আলোচনায় বসেছিলেন।
সেই আলোচনায় আনসার সাহাবিরা রাসুল সাঃ কে বললেন, ইহুদিরা প্রতি সপ্তাহে একটি দিনে একত্রিত হয়, তাদের একত্রিত হওয়ার একটি নির্দিষ্ট দিন রয়েছে।
নাসারারাও প্রতি সপ্তাহের একতি নির্দিষ্ট দিনে একত্রিত হয়। সুতরাং আমাদেরও সপ্তাহের একটি নির্দিষ্ট দিন প্রয়োজন, যে দিনে আমরা সবাই একত্রিত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করবো, সম্মিলিত ও কাতারবদ্ধ হয়ে নামাজ আদায় করবো।
অতঃপর তারা আলোচনায় বললেন, শনিবার ইহুদিরা একত্রিত হয়, আর রোববার নাসারা একত্রিত হয়। অবশেষে সবাই ইয়াওমুল আরুবা শুক্রবারকে একত্রিত হওয়ার দিন হিসেবে বেঁছে নিলেন। (সীরাতুল মুস্তাফা ও দরসে তিরমিজি)
জুমার দিনের গুরুত্ব ও ফজিলত
মুসলমানদের জন্যে জুমার দিন একটি মর্যাদাপূর্ণ দিন। মহান আল্লাহ তায়ালা জুমার দিনটিকে পৃথিবীর সেরা তাৎপর্য দিবস হিসেবে বিশেষ মর্যাদায় ভুষিত করেছেন।
আল্লাহ তায়ালা জুমা প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে বলেন,
‘অতঃপর নামাজ সমাপ্ত হলে তোমরা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড় এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান কর ও আল্লাহকে অধিকরূপে স্মরণ কর; যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সূরা জুমুআ, আয়াত : ১০)
জুমা প্রসঙ্গে রাসুল সাঃ বলেন,
‘দিবসসমূহের মধ্যে জুমার দিন শ্রেষ্ঠ এবং তা আল্লাহর কাছে অধিক সম্মানিত।’ (ইবনে মাজাহ: ১০৮৪)।
জুমা প্রসঙ্গে বিভিন্ন হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে,
‘সূর্য উদিত হওয়ার দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। এই দিনে আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছে এবং এই দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করা হয়েছে।’ (মুসলিম: ৮৫৪)
জুমার দিনের ১১টি আমল
হাদিসের আলোকে পবিত্র জুমার দিনে আমাদের মুসলিমদের জন্য বিশেষ কিছু আমল রয়েছে। এই আমলগুলো না করলে আমরা সবাই ফজিলত থেকে বঞ্চিত হবো।
নিচে জুমার দিনের ১১টি সুন্নত আমল উল্লেখ করা হয়েছে, যে আমলগুলো অনেক ফজিলতপূর্ণ।
চলুন জুমার দিনের ১১টি সুন্নত আমল জেনে নেই–
১) জুমার আজান হলে কেনাবেচা বন্ধ করা।
২) গোসল কর।
৩) উত্তম পোশাক পরিধান করা।
৪) আতর বা সুগন্ধি ব্যবহার করা।
৫) দ্রুত মসজিদে যাওয়া।
৬) পায়ে হেটে মসজিদে যাওয়া।
৭) তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করা।
৮) বেশী বেশী দরুদ পাঠ করা
৯) মনোযোগ দিয়ে খুতবা শোনা ও জুমার নামাজ আদায় করা
১০) সুরা কাহাফ সম্পূর্ণ বা শেষ ১০ আয়াত তিলাওয়াত করা।
১১) দোয়া কবুলের দিনে দোয়ার প্রতি মনোযোগ দেয়া।
(আবু দাউদ: ৩৪৩, ১০৪৭; ১০৪৮; সুরা জুমা: ৯; বুখারি: ৯২৯, ১১৬৭; আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইল: ৯৫২; সহিহ তারগিব: ১৪৭৩; আদাবুল মুফরাদ: ১০৯৪)
শেষ কথাঃ উপরের জুমার দিনের ১১টি আমল ছাড়াও আরও অনেক আমল রয়েছে। আমরা চেষ্টা করবো পরবর্তী সময়ে আরও জুমার দিনের আমল নিয়ে আলোচনা করার।
মহান আল্লাহ তায়ালা সবাইকে জুমার দিনের সুন্নত ও অন্যান্য আমল করার এবং জুমার দিনের মতো প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে গিয়ে আদায় করার তওফিক দান করুন, আমিন।