বিদ্যুৎ বিল হিসাব করার নিয়ম
এই গরম কালে আমাদের ফ্যানের প্রয়োজনীয়তা বেড়ে গেছে। যতটুকু সময় বিদ্যুৎ থাকে ততটুকু সময় যেনো ফ্যান ছাড়া চলেই না। পাশাপাশি এসিসহ অন্যান্য ইলেক্ট্রিক জিনিপত্রের ব্যবহার তো আছেই। সবমিলিয়ে কারেন্টের বিল চোখে পড়লে নিজের কান্না থামানো যায় না।
চলুন তবে আজ এই কান্না বন্ধ করার বেশকিছু উপায় অর্থ্যাৎ বিদ্যুৎ বিল বেশি আসলে করণীয়, বিদ্যুৎ বিল হিসাব করার নিয়মসহ অন্যান্য বিষয় সম্পর্কে জানি।
বিদ্যুৎ বিল বেশি আসলে করণীয়?
রান্নার গ্যাস থেকে শুরু করে জ্বালানি তেলের দাম কোনোকিছুই এখন হাতের নাগালে নেই। সবকিছুর দাম বাড়তি৷ তার উপর যদি বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে তাহলে যেনো আর দুঃখের কোনো শেষ নেই৷ চলুন তবে অস্বাভাবিকভাবে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসলে করণীয় সম্পর্কে জানি।
১. শুরুতে বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করুন। তারাই বলে দেবে আপনাকে কি করতে হবে। আপনার সিটিতে বিদ্যুৎ অফিস কোথায় তা জানতে কারেন্টের বিলটি চেক করুন। প্রয়োজন তাদের হেল্প লাইন নাম্বারে কল দিয়ে ঠিকানা নিন। অথবা বিলের পরিমাণ বেশি আসার কারণ নিয়ে কথা বলুন। আশা করি এই প্রথম ধাপেই আপনার বিদ্যুৎ বিল বেশি আসার সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
২. এরপর আপনার ইউনিট চেক করুন। আগের কারেন্টের বিলের সাথে ইউনিটের পরিমাণ এদিকসেদিক টাইপের সেইম আছে কিনা চেক করুন। যদি দেখেন অনেক বড় তফাৎ চোখে পড়ছে তাহলে ধরে নিতে হবে ইউনিট হিসাব করতে গিয়ে কতৃপক্ষের কোনো ভুল হয়েছে। এক্ষেত্রে সরাসরিই যোগাযোগ করুন বিদ্যুৎ অফিসের সাথে।
৩. ইউনিট চেক করেও যদি কোনো সমস্যা না পান সেক্ষেত্রে চেক করতে হবে মিটার। বিশেষ করে আপনার মিটারে প্রদর্শিত ইউনিট সংখ্যাটা ভালোভাবে চেক করে দেখুন৷ এরপর আপনার সমস্যা থাকা বিলে উল্লেখিত ইউনিটের সংখ্যা ভালোভাবেমিলিয়ে দেখুন। যদি মিল না থাকে, তার মানে আপনার বিলে ইউনিটের পরিমাণ লিখতে গিয়ে ভুল করা হয়েছে। এর কারণেও আপনার ধারণার বাইরেও কারেন্টের বিল আসতে পারে।
৪. মিটারের ইউনিট চেক করার পর যদি দেখেন সবকিছু ঠিক আছে তাহলে ধরে নিতে হবে আপনার মিটারে সমস্যা আছে। যা বের করতে হলে মিটার যাচাই করতে হবে। মিটারে সমস্যার ক্ষেত্রে মিটারে যান্ত্রিক ত্রুটি থাকতে পারে। অনেক সময় আবার মিটারে ভুল রিডিংও দেখাতে পারে। যদি এমন সমস্যা দেখেন সেক্ষেত্রে নিজে কোনো পদক্ষেপ না নিয়ে সরাসরি বিদ্যুৎ অফিসে অভিযোগ করুন৷
৫. ইউটিউব ভিডিও এবং অনলাইন সোর্স ঘাটাঘাটি করে দেখতে পারেন আপনার মতো এই সমস্যা অন্য কারো ক্ষেত্রে ঘটেছে কিনা। কারণ যদি এই সমস্যা অনেকের মাঝে দেখা দেয় তাহলে ধরে নিতে হবে ভুলবশত কতৃপক্ষ অনেক ব্যবহারকারীর ক্ষেত্রেই একই ভুল করে বসে আছে। এক্ষেত্রে সরাসরি ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করতে পারেন।
৬. যারা মূলত এলইডি বাল্ব এবং ইনভার্টার প্রযুক্তিসম্পন্ন রেফ্রিজারেটর ও এসি ব্যবহার করেন না তাদের কিন্তু মাথায় রাখতে হবে এই ধরণের প্রোডাক্ট ব্যবহারে বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। সুতরাং এসব প্রোডাক্ট যাদের আছে এবং যারা ব্যবহার করেন তারা বাড়তি বিল দেখে ঘাবড়াবেন না। কারণ এমনটাই হওয়ার কথা ছিলো।
৭. ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার না হলে যাদের প্লাগ খুলে রাখার অভ্যাস নেই তাদের বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ অনেক বেশি আসতে পারে। যা দেখে আফসোস না করে নিজেদের অভ্যাস পরিবর্তনে ফোকাস করতে পারেন।
বিদ্যুৎ বিল হিসাব করার নিয়ম
বিদ্যুৎ বিল বেশি আসলে করণীয় হিসাবে আগে থেকেই বিদ্যুৎ বিল হিসাব করার নিয়ম সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।
শুরুতে বলে৷ রাখি প্রতি কেবি বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য স্থায়ী খরচ হিসাবে আগে নেওয়া হতো ১৫ টাকা। কিন্তু এখন তা বেড়ে গেছে। এখন চার্জ করা হয় ৩০ টাকা। সাধারণত প্রতি সেকেন্ড এক কিলোওয়াট হারে বিদ্যুৎ বিল আসে।
এভাবে এক ঘন্টায় যত কিলোওয়াট হবে তার উপর ভিত্তি করে আপনার বিল কত আসবে তা হিসাব করা হবে।
এখানে আরেকটি বিষয় মাথায় রাখা জরুরি এবং সেটি হলো আপনার ঘরে ব্যবহৃত ইলেক্ট্রনিক প্রোডাক্ট। প্রতিটি প্রোডাক্ট ব্যবহারেই আলাদা আলাদা কিলোওয়াট খরচ হতে পারে। যেমন এসি ব্যবহারে লাগে ১৮০০ ওয়াট ঘন্টায়, ওয়াশিং মেশিনে লাগে ৫০০ ওয়াট ঘন্টায়।
এভাবে কিলোওয়াটের পরিমাণ বাড়তে বা কমতে পারে। আর এই কিলোওয়াটের ঘন্টার বিল হিসাব করেই আপনার বিল বসানো হয়।
সুতরাং যদি কোনো বিদ্যুৎ বিল অস্বাভাবিক বেশি চোখে পড়ে সেক্ষেত্রে পুরো বাড়ির কিলোওয়াট হিসাব করে একটা রাফ হিসাব করে নিতে পারেন। তবেই বুঝবেন আপনার হিসাবে আর আপনার বিলের হিসাবে কতটুকু তফাৎ আছে।
বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায় কি কি?
অনেক সময় আমাদের ভুলের কারণে বিদ্যুৎ বিল অনেক বেশি পরিমাণে আসতে পারে। এক্ষেত্রে এই ধরণের সমস্যা থেকে বাঁচতে বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায় ফলো করা যেতে পারে। চলুন তবে আর কথা না বাড়িয়ে জেনে নিই বিদ্যুৎ বিল কমানোর উপায়গুলি কি কি সে-সম্পর্কে:
এসি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হোন
গবেষণা বলছে এসির তাপমাত্রা ঠিক রাখলে বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ অনেক কম আসে। এক্ষেত্রে এসির তাপমাত্রা রাখতে পারেন ২৬ ডিগ্রি বা তার উপরে। সেই সাথে এসি নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
যদি কখনো এসিতে কোনো সমস্যা দেখেন তা অবহেলা না করে সেই সমস্যার সার্ভিসিং করিয়ে নিন। কারণ এসিতে সমস্যা থাকাকালীন সময়ে এসি চালালে অনেক বেশি বিল আসে। তাছাড়া স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি এসি চালানোর অভ্যাস থাকলে তা এখনই পরিবর্তনের চেষ্টা করুন।
সৌরবিদ্যুৎ কে “হ্যাঁ” বলুন
প্রাথমিকভাবে ব্যয়বহুল মনে হলেও সৌরবিদ্যুৎ কিন্তু আপনার বিলের খরচ কমিয়ে দেবে। দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগ হিসাবে সরাসরি বিদ্যুৎ লাইন কেটে দিয়ে সৌরবিদ্যুৎ লাইন নিয়ে আসতে পারেন।
এতে করে আপনি দু’টো লাভ পাবেন। এক. বিদ্যুৎ বিলের মতো প্রতি মাসে মাসে বাড়তি খরচ দিতে হবে। দুই. জাতীয় গ্রিডের বিদ্যুতের ওপর নির্ভর করে আপনাকে বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হবে না৷ সুতরাং পরিবেশের ক্ষতি না করে আজই বাসার বারান্দা, ছাদে সৌরবিদ্যুতের লাইন আনার ব্যবস্থা করুন এবং ম্যাজিক দেখুন৷
ইলেকট্রনিক প্রোডাক্টের যত্ন নিন
নিজের পাশাপাশি রেফ্রিজারেটর, টিভি ও ওয়াশিং মেশিনের মতো সকল ইলেকট্রনিক প্রোডাক্টের যত্ন নিন। বিশেষ করে যেসব প্রোডাক্ট আপনি নিয়মিত ব্যবহার করছেন এবং যেসব প্রোডাক্ট অনেকদিন ধরে পড়ে আছে, কিন্তু আপনার ব্যবহার করা হচ্ছে না, সেসব প্রোডাক্টের নিয়মিত যত্ন নিন।
প্রতি ২/৩ মাস পরপর ভালো কোনো ইলেক্ট্রিয়ানকে ডেকে জেনে নিন কোনো সমস্যা আছে কিনা। মনে রাখবেন ইলেকট্রনিক প্রোডাক্টের যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অনেকসময় বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ বেড়ে যায়।
নিজেকে পরিবর্তন করুন
আমরা কিন্তু চাইলেই নিজেকে পরিবর্তনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারি। বিশেষ করে নিজেকে সাশ্রয়ী করে তোলার মাধ্যমে এটি সম্ভব। যখন লাইটের ব্যবহার চলছে না তখন লাইটটি অফ করে দিন।
যখন ফ্যানের দরকার নেই তখন ফ্যান চালাবেন না। যাদের বাড়ির পাশেই পুকুর তারা ওয়াশিং মেশিন চালাবেন না। এভাবেই নিজেকে সাশ্রয়ী করে তোলার মাধ্যমে বাড়ির বিদ্যুৎ বিলের পরিমাণ অনেকটা কমে আসবে।
পাশাপাশি প্রকৃতির শীতল সান্নিধ্য পেতে বাড়ির আশেপাশে প্রচুর গাছপালা লাগান। বাসাবাড়ির ছাদকে করে তুলুন মিনি গার্ডেন। নিয়মিত গাছগুলির যত্ন নিন। জানালায় বিভিন্ন লতাবাহার ছড়িয়ে দিন। দেখবেন ফ্যান কিংবা এসির ব্যবহার ছাড়াই পুরো বাড়িতে শান্তির বাতাস ছড়িয়ে পড়েছে।