চিকন হওয়ার উপায় কি? ১০টি সহজ ও স্বাস্থ্যকর উপায়
জানুনঃ খুব তাড়াতাড়ি চিকন হওয়ার উপায় ও চিকন হওয়ার খাদ্য তালিকাসহ চিকন হওয়ার ১০টি সহজ উপায়।
আমাদের আশেপাশে মোটা স্বাস্থ্য নিয়ে হতাশায় ভুগছেন অনেক মানুষ। মোটা স্বাস্থ্যর জন্য আপনি যতোটা না শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তার থেকে বেশি মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
আজকাল প্রায় মানুষেই চিকন হওয়ার উপায় নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে যান। আবার অনেকেই মনে করেন না খেয়ে থাকলে চিকন হওয়া যায়। কিন্তু এই ধারনা সম্পূর্ণ ভুল।
আপনি যদি সঠিক নিয়মে চিকন না হতে পারেন তাহলে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। তাই আপনারা যারা চিকন হতে চান তারা অবশ্যই সঠিক নিয়মে ওজন কমিয়ে চিকন হওয়ার চেষ্টা করবেন।
আজকে আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো চিকন হওয়ার উপায় কি? ও চিকন হওয়ার ১০টি সহজ ও স্বাস্থ্যকর উপায়। চলুন জেনে নেওয়া যাক চিকন হওয়ার সেরা ও সহজ ১০টি উপায়।
সহজে চিকন হওয়ার উপায় গুলো কি কি?
চিকন স্বাস্থ্যের জন্য প্রথমে আপনাকে জেনে নিতে হবে আপনার মোটা হওয়ার কারণ গুলো কি কি? আমাদের স্বাস্থ্য মোটা চিকন হওয়া নির্ভর করে মাদের খাদ্যভ্যাস, লাইফস্টাইল ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর।
মোটা হয়ে যাওয়ার অনেক কারণ হতে পারে যেমন- সঠিক খাদ্যভ্যাস মেনে না চলা, পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমের ঘাটতি, কোনো রোগ বা ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ইত্যাদি।
এসব সমস্যার কারণে অনেক সময় চিকন হওয়ার চেষ্টা করলেও চিকন হতে পারেন না। আবার এমনও হয় একবার চিকন হওয়ার পর আবার কিছু দিন পর আগের মতোই হয়ে যাচ্ছে।
আপনি যদি সঠিক নিয়মে একবার চিকন হয়ে যান তাহলে আগের মতো স্বাস্থ্যে ফিরে যাওয়ের সুযোগ অনেক কম আছে। চিকন হওয়ার জন্য আপনাকে যা যা মেনে চলতে হবে।
১। আপনার BMR জেনে নিন
চিকন হতে আপনাকে আপনার BMR জেনে নিতে হবে। বিএমআর হলো আমাদের ওজন, উচ্চতা, দৈনিক কাজের হিসাব পরিমাপ করে বলে দেয় আমাদের শরীরের ক্যালরি চাহিদা কত।
চিকন হওয়ার জন্য আপনাকে আপনার শরীরের চাহিদার তুলনায় ১৫% কম ক্যালরি গ্রহন করতে হবে। তারপর আপনাকে আস্তে আস্তে ক্যালরি গ্রহনের চাহিদা কমিয়ে আনতে হবে।
কখনো একেবারে ক্যালরি কমিয়ে ফেলতে যাবেন না তাতে আপনার শরীরের ক্ষতি হবে। ফ্যাটলস না হয়ে মাংসপেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
২। সঠিক সময়ে ব্রেকফাস্ট করুন
আমরা যারা চিকন হতে চাই তাদের মাঝে অনেকেই সকালের খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে দেই, চিকন হওয়ার আশায়। কিন্তু এটা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতোটা ক্ষতিকর তা হয়তো আপনি সাথে সাথে বুঝবেন না।
কিছু দিনের জন্য আপনার শরীরের ওজন কমলেও পুনরায় তা ফিরে আসার সম্ভবনা থাকে। সকালে খাবার আমাদের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে।
আমাদের শরীরে মেটাবলিজম ঠিক থাকলে দ্রুত হজম হবে এবং ওজন কমাতে সাহায্য করবে। তাই প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে সকাল ৯টার মাঝে সকালের খাবার শেষ করুন।
৩। ওয়েট লস ডায়েট প্ল্যান তৈরি করুন
চিকন হওয়ার জন্য অনেক ওয়েট লস এবং ডায়েট প্ল্যান আছে। আপনার শরীরের জন্য কি ধরনের ডায়েট প্রয়োজন তা একজন ডায়েটিশিয়ানের কাছ থেকে জেনে নিতে পারেন।
তাছাড়া আপনি ঘরে বসেই বের করতে পারবেন কি ডায়েট প্ল্যানটি আপনার জন্য সঠিক হবে। আপনার বিএমআর অনুযায়ী ক্যালরি হিসাব করে আপনার ডায়েট প্ল্যান পছন্দ করে নিবেন।
নিচে কিছু ডায়েট প্ল্যানের তালিকা দিয়ে দিলাম।
- কিটো ডায়েট
- লো-কার্ব
- ক্রাশ ডায়েট
- জিএম ডায়েট
- ইন্টারমিডিয়েট ফাস্টিং
এই ডায়েট প্ল্যান গুলো চিকন হওয়ার জন্য বর্তমানে খুব জনপ্রিয়। এগুলো ফলো করে আপনি সহজে চিকন হতে পারবেন।
৪। চিকন হতে ব্যায়াম করুন
চিকন ও আকর্ষণীয় শারীরিক গঠন কে বা না চায়। চিকন ও আকর্ষণীয় শারীরিক গঠন পেতে ব্যায়ামের কোনো বিকপ্ল নেই। ব্যায়াম করলে আমাদের রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং শরীরে জমে থাকা ক্ষতিকর ফ্যাট নির্গত করে।
প্রত্যেক দিন নিদিষ্ট কোনো সময়ে ব্যায়াম করুন। কিন্তু ব্যায়াম করার আদর্শ সময় হচ্ছে সকাল এবং বিকাল। প্রত্যেকদিনে অন্তত ৪৫ মিনিট থেকে এক ঘন্টা ব্যায়াম করার অভ্যাস করুন।
চিকন হওয়ার জন্য কিছু কার্যকরী ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটা, দৌড়ানো, জগিং, সাতার কাটা, সাইকেলিং, ওয়েট লিফটিং ইত্যাদি।
তাছাড়া আপনি ঘরে বসে আরো কিছু ব্যায়াম করতে পারবেন তা নিচে দেওয়া হলোঃ
- যোগব্যায়াম
- জুম্বা
- এ্যারোবিক্স
- কার্ডিও
- রেজিসটেন্স
৫। খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেটের চেয়ে প্রোটিন বেশি রাখুন
কার্বোহাইড্রেট আমাদের ওজন বৃদ্ধি করে এবং মোটা করে ফেলে। তাই আমাদের খাবার তালিকায় কার্বোহাইড্রেট কম রাখতে হবে এবং প্রোটিনের পরিমাণ বেশি রাখতে হবে।
আমাদের ভাত, আলু, রুটি, এগুলোর পরিবর্তে মাছ, ডিম, মুরগির মাংস এসব খাবার গ্রহন করতে হবে। আমাদের গরুর মাংস এবং খাসির মাংস এড়িয়ে চলতে হবে। গরুর মাংস এবং খাসির মাংসের চেয়ে মুরগির মাংসে চর্বি কম থাকে।
প্রোটিনযুক্ত খাবার আমাদের শরীরে শক্তি যোগান দিয়ে থাকে। অন্যদিকে কার্বোহাইড্রেট আমাদের মাংসপেশি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। তাই চিকন হওয়ার জন্য কার্বোহাইড্রেট পরিহার করতে হবে।
৬। ফাস্টফুড এবং কোমল পানীয় পরিহার করুন
মোটা হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ফাস্টফুড এবং কোমল পানীয়। এসব খাবার খেতে ভালো লাগলেও কিন্তু আমাদের শরীরের জন্য অনেক ক্ষতিকারক।
যারা চিকন হতে চান তারা কিন্তু এসব খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে দিতে হবে। ফাস্টফুট খাবার তৈরি করার জন্য ফ্যাট জাতীয় উপকরন ব্যবহার করা হয়। আর কোমল পানীয়তে থাকে অনেক চিনি এবং কার্বোড্রাইট অক্সাইড।
এসব খাবার খেলে শরীরে অনেক রোগ দেখা দিতে পারে যেমনঃ ডায়বেটিস, ওবিসিটি, হৃদরোগ ইত্যাদি।
৭। পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন
আপনি যদি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করেন তাহলে খুব সহজেই চিকন হয়ে যাবেন। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮ থেকে ১২ গ্লাস পানি পান করলে আপনার শরীর থেকে ক্ষতিকারক ফ্যাট এবং রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয়ে যাবে।
তাতে আপনার শরীর হাইড্রেট থাকে এবং চর্বি জমা হবে না। পানি আমাদের মেটাবলিজম বাড়াতে সাহায্য করে। প্রত্যেকবার খাবার খাওয়ার আগে এক গ্লাস পানি খাবেন তাতে আপনার খাবারের চাহিদাও কমে যাবে।
৮। রাতের খাবার ঘুমানোর দুই ঘন্টা আগে শেষ করুন
চিকন হওয়ার জন্য রাতের খাবার সঠিক সময়ে খাওয়া খুবই প্রয়োজন। অনেকেই রাতের খাবার শেষে ঘুমাতে চলে যান, কিন্তু আপনি যদি এমন করেন তাহলে আপনার শরীরে অনেক ফ্যাট জমা হবে।
রাতে খাবার খাওয়ার পরই ঘুমাতে চলে গেলে, এতে আমাদের সেই খাবার ফ্যাট হিসেবে জমা হয়। তাই আমাদের উচিৎ ঘুমানোর দুই ঘন্টা আগে রাতের খাবার শেষ করা। দুই ঘন্টা আগে খাবার খাওয়ার ফলে সেই খাবারের ক্যালরি আমরা কাজ করার সময় ব্যবহার হয়ে যাবে।
৯। চিকন হতে পর্যাপ্ত ঘুমান
চিকন হওয়ার জন্য সঠিক সময় মেনে ঘুমানো খুব প্রয়োজন। ঘুমালে আমরা সারাদিনের কাজ করার শক্তি পাই এবং ঘুমের সময় আমাদের শরীরিক ঘটতিগুলো পূরন হয়।
প্রতিদিন কমপক্ষে আট ঘন্টা ঘুমানো প্রয়োজন। দশটা থেকে এগারোটার মাঝে রাতে ঘুমিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। কিন্তু কখনো দুপুরের খাবার খাওয়ার পরে ঘুমাতে যাবেন না। যদি ঘুমিয়ে পড়েন তাহলে এই খাবার আমাদের শরীরে ফ্যাট হিসেবে জমা হবে।
ফলাফল আপনি চিকন হওয়ার বদলে আরও মোটা হয়ে যাবেন।
১০। নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখুন
অতিরিক্ত চিন্তা চিকন হওয়ার মাঝে বাধা সৃষ্টি করে। সবসময় নিজেকে চিন্তামুক্ত রাখার চেষ্টা করবেন।
অতিরিক্ত চিন্তার ফলে আমাদের পরিপাক ক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়ে খাদ্য হজমের সমস্যা দেয় যার কারণে খাবার গুলো শক্তিতে রূপান্তরিত না হয়ে আমাদের শরীরে ফ্যাটের পরিমাণ বৃদ্ধি করে।
আপনি যদি চিকন হতে চান তাহলে এই কথা গুলো সবসময় মাথায় রাখবেন। শুধু মাথায় রাখলেই হবেনা, আর্টিকেলে উল্লেখিত উপায়গুলো মেনে চলতে হবে। তবেই আপনি সহজে চিকন হতে পারবেন।
চিকন হওয়া নিয়ে শেষ কথা
এই ছিলো চিকন হওয়ার সহজ উপায়। আপনি যদি চিকন হতে চান তাহলে আপনাকে সময় এবং ধৈর্য্য নিয়ে চেষ্টা করতে হবে। খুব তাড়াতাড়ি চিকন হওয়ার চেষ্টা না করে স্বাস্থ্যকর উপায় গুলো মেনে চিকন হওয়ার চেষ্টা করুন।
আপনি যেমন একদিনে মোটা হননি তাই আবার একদিনে চিকন হতেও পারবেন না। চেষ্টা করে যান এবং আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করুন। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ্য থাকবেন, আল্লাহ হাফেজ।