ঈদের ইতিহাস, ঈদের পেছনের গল্প কি? ঈদ কবে থেকে শুরু হয়?
ঈদের ইতিহাস, ঈদের পেছনের গল্প কি? ঈদ কবে থেকে শুরু হয়? বাঙালির ঈদ উৎসব। ঈদ কখন শুরু হয়? ঈদ কবে হয়? ঈদের শুরু কিভাবে?
পৃথিবীতে সর্বমোট ধর্ম রয়েছে ৪,৩০০ টি। তার মধ্যে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ৭৭১.৫০ কোটি (প্রায়) যা বিশ্বজনসংখ্যা রিপোর্ট ২০১৯ এর মতে।
এর মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ২০০ কোটি। আর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হচ্ছে ঈদ। মুসলমানদের প্রতি বছরে দুইটি ঈদ রয়েছে। এর একটি ঈদ-উল ফিতর (রোজা ঈদ) আর অপরটি হচ্ছে ঈদ-উল আযাহা ( কোরবানি ঈদ)।
বাংলাদেশের মুসলমানরা সবচেয়ে বড় উৎসব হিসেবে বিবেচনা করেন ঈদ-উল ফিতরকে এবং এক কথায় সবার কাছে পরিচিত রোজা ঈদ হিসেবে।
এই সময় মুসলমানরা রোজা রাখে, দীনের পথে চলে, নামাজ কায়েম করে, সেহেরি ও ইফতার করা ইত্যাদির মাধ্যমে মুসলমানরা এই সময়টাকে অতিবাহিত করে থাকেন।
ঈদ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব হলেও এই ধর্মের আবির্ভাবের সাথে সাথেই কিন্তু ঈদের প্রচলন শুরু হয় নাই।
ঈদ-উল আযহা কখন থেকে শুরু হয়েছিল তার ইতিহাস সকল মুসলমানরা জানে বা কারো মুখে শুনে থাকবেন। কিন্তু ঈদ-উল ফিতর কখন আর কিভাবে প্রচলিত হয়েছিল, সেই সম্পর্কে তথ্য কমই জানা যায়।
ইসলাম ধর্মে কখন ঈদ চালু হয়েছিল?
ইসলামের ইতিহাস বিষয়ক গবেষক এবং বিশেষজ্ঞদের সাথে কথা বলে জানা গেছে যে, ৬২৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম ঈদ উদযাপন করা হয়েছিল।
তাছাড়া বাংলাদেশের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক মোঃ আতাউর রহমান মিয়াজি (বিবিসি) তিনি বলেন, হিজরী দ্বিতীয় সনে ঈদের প্রবর্তন করা হয়েছিল।
৬২২ খ্রিস্টাব্দে মহানবী মুহাম্মদ (সা.) যখন মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করেন ঠিক তখন সেই সময়কে ভিত্তি করে হিজরী সাল এর গণনা করা হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে অবশ্য হিজরী সাল গণনা শুরু করা হয়েছিল আরও ১৭ বছর পরে, খলিফা উমরের (রা.) এর সময়।
অধ্যাপক মোঃ আতাউর রহমান মিয়াজি বলেন, “হিজরী প্রথম বছরের অষ্টম মাস অর্থাৎ শাবান মাসে রোজা বাধ্যতামূলক করার আয়াত নাজিল হয় এবং নবম মাস অর্থাৎ রমজান মাসের একমাস সিয়াম (রোজা) সাধনাকে ফরজ করা হয়েছিল”।
এরপর হিজরীর দ্বিতীয় সালে এসে বিধান দেওয়া হয় যে, রমজান মাস – চাঁদের উপর নির্ভরশীল করে যা ২৯ দিন কিংবা ৩০ দিন শেষে ” শাওয়াল” মাসের প্রথম দিন ঈদ পালন করা হবে।
অর্থাৎ রমজান মাস হচ্ছে সাওম সাধনের মাস। আর এই একমাস তথা রমজান মাস শেষে শাওয়াল মাসের প্রথম দিন মুসলমানদের প্রথম ঈদ। যাকে আমরা বলে থাকি, ঈদ-উল ফিতর বা রোজা ঈদ।
“ঈদের সামাজিকতা ওই সময় থেকে শুরু হয়,” যোগ করেন ইসলামের ইতিহাসের এই অধ্যাপক।
প্রথম যুগের ঈদ কিভাবে পালন করা হয়েছিল?
ঈদ আরবি শব্দ। এর মানে আনন্দ, খুশি, উৎসব ইত্যাদি। মুসলমানদের জন্য ঈদ পালন করা ওয়াজিব। ঈদ পালনের কিছু নিয়ম ইসলামে নিদিষ্ট করা আছে।
- এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ঈদের দিন সকালে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা, যা সব মুসলমানের জন্য অবশ্য পালনীয়।
- এছাড়া ঈদ-উল ফিতরে ফিতরা প্রদান করাও একটি রীতি। ফিতরা ঈদের নামাজের আগে অসহায় গরিব-দুঃখীদের দিতে হয়।
- নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ ঈদের দিনে গোসল করে উত্তম পোশাক পরে নামাজ পড়তে যেতেন। তাই ঈদের দিন গোসল ও উত্তম পোশাক পরিধান করতে হবে।
- এছাড়া ঈদের নামাজের পর মিষ্টি দ্রব্য খাওয়া এবং আত্মীয় পরিজন, প্রতিবেশী বন্ধুদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময়ের রেওয়াজ করা।
বাংলায় বা ভারতবর্ষে কখন ও কিভাবে ঈদ পালনের সূচনা ঘটে?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেছেন, প্রায় দেড়শ বছর আগেও ভারতবর্ষে সাধারণের মধ্যে ঈদ তেমিন বড় কোন উৎসব ছিল না। তিনি বলেন, ফরায়েজী আন্দোলনের নেতা হাজী শরীয়তুল্লাহর সময় বঙ্গে উৎসব করে ঈদ উদযাপনের চল শুরু হয়।
“তার আগে এখানে মুসলমান ছিলেন অনেক, কিন্তু তাদের রীতি-নীতির মধ্যে লোকায়ত ধর্মের মিল ছিল বেশি। যে কারণে ওই সময়ে ঈদ উদযাপনের তথ্য তেমন পাওয়া যায় না,”।
মুঘলরা ঢাকায় এসেছিল ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে। তখন তাদের মত করে বঙ্গে ঈদ উদযাপন শুরু হয়েছিল।
অধ্যাপক মামুন আরও বলেন, “ঈদের চাঁদ উঠলে তারা আনন্দ-উৎসবে মেতে থাকতেন। কামান দাগা হত। ঈদের দিন তারা একসঙ্গে নামাজ পড়তেন, নামাজ পড়ে ফেরার পথে হাতি বা ঘোড়ার পিঠ থেকে তারা সাধারণ মানুষের দিকে পয়সা ছুঁড়ে দিতেন। ঈদ তাদের নিজেদের মধ্যেই উদযাপিত হত, সাধারণ মানুষের তার সাথে সংযোগ ছিল না।”
তিনি আরও বলেন যে, মুঘলদের তৈরি ঈদের একটা প্রতীক ছিল যা এখনো ঢাকায় আছে, সেটি হচ্ছে ধানমন্ডির ঈদগাহ।
ঢাকা কেন্দ্রীয় ঈদ উৎসব
পূর্বে সাধারণ মানুষের মধ্যে ঈদ পালনের তেমন চল ছিল না। তখনকার সময়ের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও ভালো ছিল না। ফলে তখনকার সময়ের ঈদ উদযাপন কেবল প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা করতে পারতেন এবং ঈদের দিন ধনী ব্যাক্তিরা সদকা বা ফিতরা প্রদান করতেন।
ধীরে ধীরে যখন অর্থনৈতিক অবস্থা সচ্চল হতে থাকে তখন উনিশ শতকের দিকে এসে মুসলমানদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সেই সাথে তখনকার সময়ের ঈদ উদযাপন ও ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকেন বলে মনে করে থাকেন ইতিহাসবিদরা।
ইতিহাসবিদদের মতে, বর্তমানে ঈদ যেমন ব্যাপক উৎসবের আকার পেয়েছে, তার শুরুটা হয়েছিল ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান রাষ্ট্র হবার পর – যা বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আস্তে আস্তে বিস্তৃত হতে থাকে।
তার আগে ঈদ উদযাপনের কেন্দ্র ছিল ঢাকা। ফলে বুঝা যায় যে, পূর্বে ঢাকা ব্যাতিত অন্যত্র অঞ্চলে ঈদের প্রচলন ছিল খুব কম এবং অর্থনৈতিক অবস্থার কারণে তখনকার মানুষ ঈদ উদযাপন করতে পারত না।
এই প্রসঙ্গে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, “বর্তমানে যেভাবে ঈদ দেশজুড়ে বড় একটি উদযাপনে পরিণত হয়েছে, তার একটা বড় কারণ ঈদকে ঘিরে তৈরি হওয়া অর্থনীতি।
মূলবক্তব্যঃ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদ। যা পূর্বের মুসলমানরা ব্যাপক আকারে উদযাপন করতে পারত না। তার সবচেয়ে বড় কারণ ছিল, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও পারিবারিক আয়ের উৎস।
শেষ কথাঃ মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব সমন্ধে জানতে পেরে আপনি কেমন অনুভব করছেন? তা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন এবং হ্যাঁ এবারে ঈদের অগ্রীম শুভেচ্ছা রইল। ঈদ কাটুক পরিবার,আত্মীয়-স্বজনদেরর নিয়ে এবং আমরা অন্যদের মাঝে ঈদের খুশি বিলিয়ে দিতে পারি যাতে। আমিন।
তথ্যসুত্রঃ বিবিসি বাংলা