তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত? কাকে বলে?
জানুনঃ তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ কি? তাহাজ্জুদ নামাজ কাকে বলে? তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত? তাহাজ্জুদ নামাজের প্রচলন কখন থেকে শুরু হয়েছে?
তাহাজ্জুদ শব্দের অর্থ কি?
তাহাজ্জুদ আরবি শব্দ। পবিত্র কোরআনে তাহাজ্জুদ শব্দের ব্যবহার আছে। তাহাজ্জুদ শব্দটি নিদ্রা যাওয়ার আগে বা জাগ্রত হওয়া এই পরস্পরবিরোধী দুই অর্থে ব্যবহার হয়।
পবিত্র কোরআনে সূরা বনি ইসরাইলে ৭৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, রাতের কিছু অংশ কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন।
তাহাজ্জুদ নামাজ কাকে বলে?
ইসলামি স্কলারদের অভিমত হলো, কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকার অর্থ নামাজ পড়া। যার কারণে ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় রাত্রিকালীন নামাজকে তাহাজ্জুদ নামাজ বলা হয়।
তাহাজ্জুদ নামাজের প্রচলন কখন থেকে শুরু হয়েছে?
তাহাজ্জুদ নামাজের প্রচলন কখন থেকে শুরু হয়েছিলো তা ঠিক বলা না গেলেও তাহাজ্জুদ নামাজের নির্দেশ সর্বপ্রথম পাওয়া যায় সূরা মুজ্জাম্মিলের প্রথম দিকের আয়াত নাজিল হওয়ার পর।
যেহেতু সূরা মুজ্জাম্মিল ইসলামের শুরুতে কোরআন অবতরণের প্রাথমিক যুগে অবর্তীণ হয়েছে, তাই বলা যায় তাহাজ্জুদ নামাজ ইসলামের প্রথম যুগ থেকেই প্রচলন শুরু হয়েছে।
শুরুতে তাহাজ্জুদ নামাজ ফরজ ছিল। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদ নামাজের এ বিধান ছিল।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন,
মেরাজের রাতে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হওয়ার আদেশ অবতীর্ণ হলে তাহাজ্জুদ নামাজের ফরজ হুকুম রহিত হয়ে নফল হয়ে যায়। হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ও অধিকাংশ সাহাবায়ে কেরাম সর্বদা নিয়মিত তাহাজ্জুদ পড়তেন। (তাফসিরে মাজহারি)
তাহাজ্জুদের মর্যাদা অপরিসীম। ফরজ নামাজের পরে উত্তম নামাজ হলো- তাহাজ্জুদের নামাজ।
হাদিসে হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন,
রমজানের পর উত্তম রোজা হলো- মহররম মাসের রোজা এবং ফরজ নামাজের পর উত্তম নামাজ হলো- রাতের তাহাজ্জুদ নামাজ।
নিয়মিত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় মুমিন বান্দাদের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত?
তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত তার সংখ্যা নির্দিষ্ট নেই। তবে আপনি চাইলে ২+২ রাকাত করে ৪ রাকাত থেকে শুরু করে আপনার ইচ্ছে মতো নামাজ আদায় করতে পারেন।
ইসলামবেত্তাদের পরামর্শ হলো- ন্যুনতম চার রাকাত আদায় করা। যে কয় রাকাতই পড়া হোক না কেনো তা শুদ্ধ ও বেশী সময় নিয়ে আদায় করা এবং নিয়মিত আদায়ের অভ্যাস করা।
যেমন হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,
হযরত আবু সালামা ইবনে আবদুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করেন, রমজানে নবীজির নামাজ কেমন হতো? তিনি উত্তরে বলেন, হযরত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমজানে এবং রমজানের বাইরে এগারো রাকাতের বেশি নামাজ পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাইবাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। (সহিহ বুখারি: ১/১৫৪)
আরেকটি হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি কাইস বলেন, আমি হযরত আয়েশা (রা.) এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম, নবীজি বিতরে কত রাকাত নামাজ পড়তেন? উত্তরে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তের রাকাতের অধিক পড়তেন না। (সুনানে আবু দাউদ: ১/১৯৩)
উল্লেখিত বর্ণনা দ্বারা বুঝা যায়, হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাহাজ্জুদ নামাজ কখন ও চার রাকাত পড়তেন, কখনো বা ছয় রাকাত পড়তেন আবার কখনও আট রাকাত পড়তেন, কখনও বা দশ রাকাত পড়তেন।
হযরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সহিহ হাদিস থেকে আমরা পেয়েছি তাহাজ্জুদ নামাজ ১০ রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। এরচেয়ে বেশি পড়া যাবে না এমনটা নয়। যেহেতু তাহাজ্জুদ নামাজ একটি নফল নামাজ, তাই যত বেশি পড়া যায় ততই সওয়াব পাওয়া যায়।
আবার সেই সাথে চার রাকাতের কম পড়লে তা যে তাহাজ্জুদ নামাজ হবে না বিষয়টি কিন্তু এমন না। আপনি যদি দুই রাকাত করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন তাহলে এই দুই রাকাত নামাজ তাহাজ্জুদ নামাজ হিসেবে গন্য হবে।
আপনার কাছে সময় কম থাকলে দুই রাকাত করে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারবেন। আপনার এই দুই রাকাত নামাজ তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে।
নফল নামাজের নিয়ত যেমন চার রাকাত করে করা যায় তেমনি দুই রাকাত করে নিয়ত করে নামাজ আদায় করা যায়। তাতে কোনো সমস্যা নেই। তেমনি আপনি চাইলেই তাহাজ্জুদ নামাজের দুই রাকাত করে নিয়ত করতে পারেন, আবার চার রাকাত করে নিয়ত করতে পারেন।
শেষ কথাঃ আশা করি জানতে পেরেছেন তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত, ইসলামিক আরও আর্টিকেল পড়তে এখানে ক্লিক করুন। ধন্যবাদ।